তিনদিন ধরে পানিবন্দী সাতকানিয়ার ১৭ ইউনিয়নের মানুষ। গৃহবন্দী হয়ে পড়া মানুষ একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে কয়েক লাখ মানুষ। সরকারি-বেসরকারি কোন ধরনের ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি বলে দাবি বন্যা কবলিত মানুষদের। বান্দরবান-কেরানিহাট সড়ক এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি কমলেও কেরানিহাট অংশ এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। হাঁটু পানি মাড়িয়ে ধীরলয়ে চলছে বড় যানবাহন।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সাতকানিয়ার প্রাণকেন্দ্র কেরানিহাট এখনো হাঁটু পানিতে ডোবা। ওই বাজারের তিন হাজার দোকান পানিতে প্লাবিত। এসব দোকানের ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পণ্য নষ্ট ও দোকান খুলতে না পারায় ভোগ্যপণ্যের জোগান তীব্র সংকটে রয়েছে।
সাতকানিয়া কেরানিহাট প্রগতিশীল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম বলেন, কেরানিহাটে তিন হাজার দোকান রয়েছে। সবকটি দোকানে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে এক হাজার দোকান এখনো বন্ধ রয়েছে। বেশির ভাগ দোকানই ভোগ্যপণ্যের। এসব কারণে ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কেরানিহাট অংশ থেকে এখনো পানি নামেনি। মৌলভীর দোকান থেকে কেরানিহাট নয়া রাস্তার মুখ পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। বড় আকারের যানবাহন হাঁটু পানি মাড়িয়ে ধীরে চলাচল করলেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। কক্সবাজার সড়কের কেরানিহাট অংশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা পানি মাড়িয়ে চন্দনাইশের কসাইপাড়া পৌঁছছে। কেরানিহাট থেকে দোহাজারী দেওয়ান হাট পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে জনপ্রতি ৭০ টাকা। আর চন্দনাইশের দেওয়ানহাট থেকে কসাই পর্যন্ত আধা কিলোমিটার ভ্যানে পারাপার করছে মানুষ। ভাড়া নিচ্ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা।
পাহাড়ি ঢলের কারণে এখনো বিপদ সীমানায় রয়েছে শঙ্খ নদীর পানি। পানি নামতে না পারায় এখনো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাতকানিয়াবাসী। এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সাতকানিয়ার কেওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদারহাট এলাকার কুলসুমা খাতুন (৭৫), তার পুত্রবধূ পারভীন আকতার ও স্থানীয় রুমি আকতার বলেন, এলাকার একটি দ্বিতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছি। নিচের তলায় গরু, উপরের তলায় আমরা আশ্রয়ে আছি। তিন দিন ধরে শুকনো খাবার খেয়েছি। আজ দুপুরে খিচুড়ি খেয়েছি। এখন আর কোনো খাদ্যসামগ্রী নেই। রাতে কী খাব জানি না। তারা বলেন, শুধু খাদ্যসামগ্রী নয়, বিশুদ্ধ পানি সংকট এখনো প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী বা সহায়তা মিলেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান আলী বলেন, পানিবন্দী-দুর্গত লোকজন যেখানে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে থাকাই ভালো। নড়াচড়া বা অবস্থান বদলালে তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। কারণ কোথাও ভালো অবস্থান নেই। পুরো সাতকানিয়া এখন পানিতে প্লাবিত। তবে পানিবন্দী লোকজনকে শুকনো খাবার বা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে না পারলে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়তে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, সাতকানিয়া উপজেলায় ৪০ হাজার পরিবারের এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬০ মেট্রিক টন চাল, নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫শ প্যাকেট বিস্কুট, ৫শ পিস ওরস্যালাইন ও ৫শ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ