চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫

আমাদের জাতি বিনিয়োগ বান্ধব নয়

আমাদের জাতি বিনিয়োগবান্ধব নয়

মাহবুব কবির মিলন

২ জুলাই, ২০২৫ | ১০:১৭ অপরাহ্ণ

আমি তখন পরিচালক, বিনিয়োগ বোর্ড, চট্টগ্রাম। একই কর্মস্থলে প্রায় আট বছর। সব বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে বিদেশি হলে, চেয়ার বসিয়ে ভাল আপ্যায়ন করে এক/দুই ঘণ্টার মধ্যে আমাদের যাবতীয় কাজ করে দিতাম।

 

বিদেশিরা এসে অনেকেই আগ্রাবাদ হোটেলে উঠত। আগ্রাবাদ হোটেল, আমাদের অফিস থেকে এক কিলোমিটারের ভিতরেই অবস্থিত। আমাদের অফিস ছিল সিজিও বিল্ডিং, মানে সরকারি অফিস ভবন-২, আগ্রাবাদ।

 

বিদেশিদের জিজ্ঞেস করতাম, তোমরা কিসে করে এই অফিসে চলে এলে। অনেকের উত্তর ছিল, বেবি ট্যাক্সি বা রেন্ট এ কার। ট্যাক্সিতে এলে আমার অফিস পাঁচ মিনিটের পথ। বাদামতলি মোড়ে খুব বেশি জ্যাম থাকলে খুব বেশি হলে দশ মিনিট। কত ভাড়া নিয়েছে? চারশ বা পাঁচশ। কতক্ষণ লেগেছে? এক বা দেড় ঘণ্টা।

 

বুঝে নিতাম ট্যাক্সি ড্রাইভার বিদেশি দেখে দুনিয়া ঘুরিয়ে এই অফিসে নিয়ে এসেছে। ভাড়া ৫০ টাকা, স্বাভাবিক ভাড়া। বাটপারের দল সব।

 

তাদের অনেকেই বলত, তোমাদের দেশে এত ভিক্ষুক কেন! রাস্তায় ফুটপাতে হাঁটা যায় না।

 

অনেকে জিজ্ঞেস করত, আমাদের খাবার নিরাপদ কি না। ডাহা মিথ্যা কথা বলে দিতাম, আমাদের খাদ্যে ভেজাল নেই (আল্লাহ মাফ করুন)।

 

অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এসে অন্যান্য অফিসে দিনের পর দিন ঘুরে হ্যারাসমেন্টের স্বীকার হয়ে আমাদের অফিসে এসে কাঁদত। হায়রে কপাল আমাদের!

 

বিডার বর্তমান চেয়ারম্যান আশিক সাহেব অনেক পরিবর্তন এনেছেন। এগুলো আগে ছিল না। অনেক চেষ্টা তিনি করছেন এবং করেছেন। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না এদেশে।

 

কারণ আমাদের জাতীয় চরিত্র। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মায়ানমার ফেলে বড় বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে আসবে না। এমওইউ ফেলে দিয়ে ওরা ওদেশে চলে যাবে।

 

আমাদের জাতি বিনিয়োগ বান্ধব নয়। আমাদের সরকারি সিস্টেম, আমলাতন্ত্র, বিনিয়োগ বান্ধব নয়। কোনো অফিস, অফিসের লোকজন বিদেশি বিনিয়োগে এক চুল ছাড় দেয় না। নমনীয় মনোভাব পোষণ করে না। একটু চিন্তা করে না যে, এরা নিজেদের দেশ ফেলে হাজার হাজার মাইল দূরে আমাদের দেশে এসেছে বিনিয়োগ করতে। এতে ওদের লাভের চেয়ে আমাদের লাভ অনেক বেশি।

 

আমাদের দেশ, আমাদের জাতি, আমাদের পরিবেশ, এর একটি কারণ বা উদাহরণ দেখাতে পারবেন না, যে কারণে ওরা এখানে আসবে বিনিয়োগ করতে, আসবে বেড়াতে। পর্যটন নামে আছে কিছু আমাদের! মানের অবস্থা কী সেখানকার! কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেখানকার উন্নয়নে!

 

আমাকে অনেকেই হতাশাবাদী বলেন। আমি হতাশাবাদী হয়েছি, চেষ্টা করে। হতাশাবাদী হয়েছি প্রমাণ পেয়ে, প্রমাণ নিয়ে। আন্দাজে হইনি। আমি অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি, কিন্তু তারপরেও আমি হতাশাবাদী। কারণ সে আলো নিভে গেছে অনেক আগেই।

 

যারা আলোর আশায় আছেন, আশার আলো দেখান একটু প্লিজ। দেখি কতটুকু আলো আছে সেখানে!

 

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট