চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিএসসিআর’র আয়োজিত সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা

অসচেতনতায় ৯৫ শতাংশ নারী আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২০ পূর্বাহ্ণ

বিশে^র অন্য দেশের মতো স্তন ক্যান্সার বাংলাদেশের নারীদের প্রথম সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যা দিনদিন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৩ শতাংশ নারী এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ১৭ শতাংশের। বেশিরভাগ ৪০ থেকে ৫৪ বছর বয়সের নারীরাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পারিবারিক জিনগত কারণে মাত্র ৫ শতাংশ নারী এ রোগে আক্রান্ত হলেও ৯৫ শতাংশ নারীই আক্রান্ত হচ্ছেন সচেতনতার অভাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রোগে শুধুমাত্র নারীরাই নয়, বর্তমানে পুরুষরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে পুরুষের সংখ্যা খুবই কম। তাদের তথ্য মতে, প্রতি ১০০ জন নারী আক্রান্ত হলে ১জন পুরুষও আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই এ রোগ থেকে বাঁচতে নারী-পুরুষ সকলকে সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম ক্লাব অডিটোরিয়ামে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। নগরীর বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালের উদ্যেগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্টের প্রখ্যাত ব্রেষ্ট ক্যান্সার শল্য চিকিৎসক ডা. সুজানে এলিসা হোক্সট্রা। বিষয়ের উপর আলোচনা করেন কনসালটেন্ট শল্য চিকিৎসক অধ্যাপক খন্দকার এ কে আজাদ ও ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ।

ডা. সুজানে এলিসা হোক্সট্রা বলেন, পরিবারের কেউ আগে থেকে আক্রান্ত হলে অন্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় নারীরা। তথ্যমতে, পরিবারের কারণে ৫ শতাংশ নারী এ রোগে আক্রান্ত হলে বাকী ৯৫ শতাংশই অসেতনতার কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে সচেতনায় এ রোগ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বাঁচাতে পারে। এর মধ্যে পরিবারের প্রতি যত্নশীল হওয়ার সাথে সাথে নিজের স্বাস্থের প্রতি ও যত্নশীল হতে হবে। সাথে সাথে কায়িক পরিশ্রম, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটি শরীর চর্চা, পরিমিত খাওয়ার এবং ¯œায়ুচাপ মুক্ত জীবন যাপনের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।

ডা. সুজানে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের প্রকোপ আশংকাজনক বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং কুসংস্কার থেকে মুক্তি ব্রেষ্ট ক্যান্সারের প্রকোপ কমাতে পারে। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলে ধরে তিনি বলেন, একাধারে অনেকদিন জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া ৩০ বছরের পর সন্তানকে বুকের দুধ পান না করালেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ৯০% শতাংশ মহিলা এই রোগটির নামের সাথে পরিচিত নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক খন্দকার এ কে আজাদ বলেন, আক্রান্ত হওয়ার আগে ৮০ শতাংশ রোগী এ রোগের নামই শোনেননি। আর ৯৫ শতাংশ রোগী জীবনে কোন দিন নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করেও দেখেননি। তাই ১৮ বছরের পর থেকে সকল মহিলার স্বউদ্যোগে স্তন পরীক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের প্রায় সকল নারীই স্তনের চাকা নিয়েই চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত হন। তবে স্তনের চাকা অনুভব হলেও রোগ নির্ণয় করতে বিলম্ব হয় ৩ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত। অধ্যাপক সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগের সামগ্রিক চিত্র, পরীক্ষার সুবিধা এবং সুলভে সম্ভাব্য চিকিৎসার বর্ননা করে ৪০ থেকে ৫৪ বছর বয়সের মহিলাদের বৎসরে একবার মেমোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ১৮ বছর থেকে ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি তিন বছর অন্তর একবার এবং ৪০ বছরের পর প্রতিবছরে একবার স্তন পরীক্ষা করালে ভালো। পরীক্ষার জন্য নিজের স্তনের স্বাভাবিকতা বুঝতে পারা এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সিএসসিআর’র অধ্যাপক জিনাত মেরাজ চৌধুরী স্বপ্না’র সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান, সিএসসিআর’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক এম এ কাশেম, এবং স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রওশন মোরশেদ ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠান রোস বাংলাদেশের কর্মকর্তা আরেফিন মোস্তফা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট