শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ট্রাফিক বিভাগের পাইলট প্রকল্প। কথা রাখেনি গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা। বরং পূর্বের চেয়েও ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের নতুন ভোগান্তিতে ফেলেছে চালকরা। এ যেন কবি হাবীবুর রহমানের ‘কাউরে ডরাই’ কবিতার ‘আমি কি আর কাউরে ডরাই, ভাঙতে পারি লোহার কড়াই’ লাইন দুটির মতো। কথা না রেখে ট্রাফিক আইনকে উল্টো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে গণপরিবহন। অথচ সম্প্রতি নগরীর গণপরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে ট্রাফিক বিভাগ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল তাকে স্বাগত জানিয়ে আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা। যার জন্য ট্রাফিক বিভাগের কাছে গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চায় গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা। তবে সময় পার হয়ে গেলেও কথা রাখেননি তারা।
সম্প্রতি নগরীর গণপরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর ব্যস্ততম দুটি রুটের পরিবহণগুলোকে কঠোর এ পদক্ষেপের আওতায় নিয়ে আসা। যেখানে নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করা। চালকদের বাধ্যতামূলক ইউনিফর্ম পরিধান, সাথে রাখতে হবে লাইসেন্স। মাঝপথে গাড়ি না ঘুরানো। যাত্রীদের ভাড়া উল্লেখ করে বিতরণ করতে হবে টিকেট। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত ১০টি স্টপেজ ছাড়া বন্ধ থাকবে গাড়ির দরজা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা মিলেছে এর উল্টো চিত্র। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামার পাশাপাশি দেখা গেছে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছার আগে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়ার দৃশ্য। শুধু তাই নয়, কোন বাস চালককে পরতে দেখা যায়নি ইউনিফর্ম। অভিযোগ ছিল, উঠা-নামার ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিটি রুটে ৩ থেকে ৪ টাকা অতিরিক্ত নেয়ার অভিযোগ।
মো. শাহাদাত কবির নামে এক যাত্রী বলেন, ‘কাজের সুবাদে ইপিজেড থেকে কাটগড় যাচ্ছিলাম। ইপিজেড থেকে কাটগড়ের ভাড়া ৭ টাকা হলেও বাসের হেলপার ১০ টাকা দাবি করে। শুধু কাটগড় নয়, কাটগড়ের আগে যে যেখানেই নামুক সবার কাছ থেকে ১০ টাকা করে ভাড়া চায় বাসটির হেলপার। কেন এই ভাড়া জানতে চাইলে হেলপার আমাকে বলে, যেখানেই নামেন উঠা-নামা দশ টাকা। আমি বিষয়টি নিয়ে ৯৯৯ এ কল করে অভিযোগ করি। তারা আমাকে ইপিজেড থানার ওসির নম্বর দিলেও ওসি বলেন এটা পতেঙ্গা থানার এলাকা। পরে কাটগড় এ পৌঁছানোর পর ট্রাফিক
পুলিশের বক্সে গিয়ে অভিযোগ দিতে গেলে সেখানে কোন সার্জেন্টের দেখা পাইনি। বাসগুলো আমাদের সেবার নামে ডাকাতি করছে। প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফ্রি-পোর্ট মোড়ে ডাকাতি করে বাসগুলো। ফ্রি-পোর্ট থেকে আগ্রাবাদের ভাড়া ৭ টাকা হলেও তারা নিচ্ছে উঠা-নামা ২০ টাকা। একই রকম এখান থেকে নিউমার্কেটের ভাড়া ১০ টাকা হলেও তারা নিচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।’
নাজিম নামে আরো এক যাত্রী জানান, ‘কাজ শেষে প্রতিদিন ১০ নম্বর রুটের বাসে করে ২ নম্বর গেট থেকে বাসায় ফেরার জন্য যাত্রা করি। বাসগুলো কালুরঘাট যাওয়ার কথা থাকলেও নামিয়ে দেয় কাপ্তাই রাস্তার মাথা মোড়ে। ২ নম্বর গেট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত ৮ টাকা ভাড়া হলেও বাস চালকরা নতুনভাবে ভাড়া বেড়েছে বলে উল্লেখ করে ১০ টাকা দাবি করে। আমরা সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি হয়ে তাদের এ অনৈতিক দাবি মেনে নিচ্ছি। এটা প্রতিদিনের ঘটনা।’
তবে নতুন করে কোন রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিআরটিএর উপ-পরিচালক মো.শহিদ উল্লাহ্। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৫ সালে সরকারি নিয়মানুসারে প্রতিটি রুটে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তখনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোন রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কোন বাস যদি ভাড়া বেড়েছে অযুহাত দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাহলে তা অবৈধ।’
এদিকে গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো কথা দিয়ে কথা রাখছে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আমির জাফর। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগের এই উদ্যোগে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা সহযোগিতা করার কথা দিলেও তারা এখন তা রাখছে না। আইন অমান্য করছে চালকরা। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আমরা আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’