চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

ভাই-বোনের ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রতিবেশী যুবক খুন

অভিযুক্ত রুবেল গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

ভাই-বোনের ঝগড়া থামাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে প্রতিবেশী মো. হেলাল হোসেন (২৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে নগরীর সদরঘাট থানাধীন পশ্চিম মাদারবাড়ি যুগিচাঁদ মসজিদ লেইনের সোবহান ফারুকীর বিল্ডিংয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. রুবেলকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সাথে তার ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান, সদরঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ফজলুর রহমান ফারুকী।

নিহত হেলাল হোসেন বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানাধীন বাদখালী গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী হাওলাদারের ছেলে। আর গ্রেপ্তার রুবেল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন দমদমখোলা গ্রামের আলী আশরাফের ছেলে।

জানা যায়, গত পাঁচ মাস আগে পশ্চিম মাদারবাড়ি জুগিচাঁদ মসজিদ লেইনের সোবহান ফারুকীর বিল্ডিংয়ের ৩য় তলার একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট বাসা ভাড়া নেয় হেলাল। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট হেলাল নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার ইবেন ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টেস-এ কাজ করতো। তার বড় ভাই অন্যত্র থাকলেও মেঝো ভাই, একমাত্র বোন ও মাকে নিয়েই এই বাসায় থাকেন হেলাল।

তবে দীর্ঘ দিন থেকেই বাসাটি ভাড়া নিয়ে দুই বোন ও মাকে নিয়েই থাকেন গ্রেপ্তার হওয়া রুবেল। রুবেল মাঝেমধ্যে সিএনজি অটোরিক্সা চালালেও বর্তমানে বেকার। বড় বোন সালেকাকে বিয়ে দিলেও গর্ভবতী হওয়ায় সেও রুবেলের বাসায় থাকেন। ছোট বোন আলেকা নগরীর একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। তবে মোবাইল ফোনে অন্য ছেলের সাথে কথা বলার কারণে সবসময় তাকে বকাঝকা করেন রুবেল।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরেও আলেকা মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় বাসায় প্রবেশ করে রুবেল। এসময় বোনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় এবং তাকে মারধর করে। পরে বোনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে গর্ভবতী বড় বোন সালেকার পেটেও লাথি মারে রুবেল। এসব দেখে নিহত হেলালের বোন সনিয়া আক্তার এগিয়ে আসলে তার শরীরেও আঘাত লাগে। বোন সনিয়ার শরীরে আঘাত সহ্য করতে না পেরে রুম থেকে বের হয়ে কথা কাটাকাটি করতে থাকে হেলাল আর রুবেল। একপর্যায়ে রুবেল তার পাশে থাকা একটি ছুরি দিয়ে হেলালের পেটে আঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত হেলালের বোন সনিয়া আক্তার পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে আমি আলেকা ও সালেকা তাদের বাসায় বসে কথা বলছিলাম। এসময় সালেকা মোবাইল ফোনে কল আসলে সে কথা বলতে থাকে। মুহুর্তের মধ্যেই তার ভাই রুবেল কোথায় থেকে এসে মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয় এবং তাকে মারধর করে। মারধর না করতে তার বোন সালেকা বাধা দিলে তার পেটে লাথি মারে। আমি এগিয়ে এসে দু’জনকে বাঁচাতে চাইলে আমার মুখে কয়েকটি ঘুষি মারে। আমি চিৎকার দিলে আমার ভাই হেলাল রুম থেকে বের হয়ে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু রুবেল কোন কথা না শুনেই হেলালের সাথে তর্ক শুরু করে। একপর্যায়ে তার রুমে থাকা একটি ছুরি দিয়ে হেলালের পেটে দুই বার আঘাত করে এবং আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়’।
সদরঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ফজলুর রহমান ফারুকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঘটনার পর স্থানীয়রা অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করে থানায় খবর দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। একই সাথে ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট