আবেদন করেই ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই সংরক্ষিত কোটায় নগরীর হালিশহর হাউজিং এসেস্টটে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান সগীর আহমেদ রানা। বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই ফ্ল্যাটটি বুঝেও নেন তিনি। তবে তাকে দিতে হয়নি কোন অর্থই! খোদ গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী প্রকৌশলী শামসুল আলমের যোগসাজশে দখল নেন ফ্ল্যাটটি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার কথা ছিল বরাদ্দের অর্থ।
শুধু তাই নয়, গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিল ভাড়ার ২১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭২ টাকা। কিন্তু সেটিও জমা দেননি দখলদার। বরং প্রভাবশালী প্রকৌশলী ও দখলদার রানা যোগসাজসে প্রায় এক দশক ধরে দখলে রাখা হয়েছে সেই ফ্ল্যাটটি। যদিও শেষ পর্যন্ত গৃহায়ণের সেই প্রকৌশলীসহ দখলদারকে আটকাতে হয়েছে দুদকের জালে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচ্য দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক ইমরান খান অপু বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শামসুল আলম ও হাজি সগীর আহমেদ রানা (৪৬)।
দুদক জানায়, ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল হালিশহর হাউজিং এস্টেটের জি ব্লকের ১০৮ টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের অবরাদ্দকৃত ৪ টি ফ্ল্যাটের ১২২৪ বর্গফুট (ফ্ল্যাট নং-২সি/১) ফ্ল্যাট নিজ নামে বরাদ্দ দিতে আবেদন করেন সগীর আহমেদ রানা। পরে ২০১৫ সালের ২ জুলাই ২/সি-১ নং ফ্ল্যাটটি সংরক্ষিত কোটায় রানার নামে বরাদ্দের সিন্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আসামি শামসুল আলম বরাদ্দপত্র প্রদান করেন। ফ্ল্যাটটি প্রদানের বিপরীতে প্রকৌশলী শামসুল আলম বরাদ্দপত্রের শর্ত না মেনেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে পারস্পরিক যোগসাজশে কোন কিস্তি/টাকা পরিশোধ ছাড়াই বাস্তব হস্তান্তর দখল প্রদান করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বসবাস করছেন আসামি সগীর আহমেদ রানা।
মামলার এজহারে বলা হয়, সরকারি বিধি মোতাবেক ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ভাড়া ২১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭২ টাকা। মো. শামসুল আলম অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিজে লাভবান হয়ে বা অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে সগীর আহমেদ রানার কাছ থেকে কোন টাকা গ্রহণ না করেই বাস্তব হস্তান্তর দখল প্রদান করেন। পারস্পরিক যোগসাজশে দখল গ্রহণকারীকে অবৈধভাবে বসবাসের সুযোগ প্রদান করে রাষ্ট্রের ২১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭২ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছেন। পাশাপাশি বরাদ্দ দিলেও কোন ডাউন পেমেন্ট বা কিস্তি পরিশোধ না করে ও প্রতারণাপূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বাস্তব হস্তান্তর দখলের মাধ্যমে প্রতারণা করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, কমিশনের নির্দেশে মামলাটি করা হয়েছে। মামলা তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আইনামলে আনা হবে।
পূর্বকোণ/ইব