চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা

চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া দুর্ভাগ্যের

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১২:০১ অপরাহ্ণ

চট্টলদরদী মরহুম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর মতো বহুমাত্রিক সম্পূর্ণ ব্যক্তি সমাজে খুব বেশি পাওয়া যাবে না। তাঁর কাজের বিস্তৃতিও ছিল ব্যাপক। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, চুয়েট প্রতিষ্ঠা আন্দোলন এবং প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিচিত করার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এছাড়াও পরিবেশ রক্ষা, ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আধুনিক প্রকাশনা শিল্পেও তিনি জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর এসব অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা দরকার। এতদিনেও তিনি জাতীয় স্বীকৃতি পাননি, সেটা দুর্ভাগ্যের। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে চট্টগ্রামও স্বীকৃতি পাবে।

 

তাঁর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বনির্ভর চট্টগ্রাম ও ইউসুফ চৌধুরী’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দৈনিক পূর্বকোণ সেন্টারের ইউসুফ চৌধুরী কনফারেন্স হলে আয়োজিত আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী। আলোচক ছিলেন দৈনিক আমাদেরসময় সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত আবুল মোমেন, সাবেক সিএজি ও সাবেক অর্থ সচিব এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, সাংবাদিক ও কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের (তদানীন্তন) সদস্য সচিব মীর মু. সাক্বী কাওসার, চিটাগং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য দেন দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন

 

বিটা’র নির্বাহী পরিচালক কবি শিশির দত্ত। উপস্থিত ছিলেন দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালক জাসির চৌধুরী।

সভায় আলোচকগণ বলেন, ইউসুফ চৌধুরী সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনার একজন মানুষ। তিনি খুবই দক্ষ ও বিচক্ষণ। নিজে একটা আলাদা বিশ^বিদ্যালয়। এতো দৃঢ়শক্তিমান ব্যক্তি খুবই কম আছে। তিনি ধ্যান ধারণায় একজন জাগ্রত মানুষ। এই মানুষটিকে আমরা রাষ্ট্রীয় কোন সম্মান দিতে পারিনি। চট্টগ্রামে যে দুটি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ইউসুফ চৌধুরীর অবদান ছিল, সেই চুয়েট এবং সিভাসুতে ওনার নামে একটি করে চেয়ার স্থাপন করা হোক।

 

সভায় জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একটা নীতি-আদর্শের মধ্য দিয়েই আমার বাবা ইউসুফ চৌধুরী জীবনটা পার করেছিলেন।

 

আবুল মোমেন বলেন, ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ। তিনি যেমন বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তেমনি নিজেকেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত করেছেন।

 

মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি বিশ^বিদ্যালয় তাঁর ইউনিক ভাবনা, অর্থনীতিতে অবদান বিবেচনায় তিনি একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইউসুফ চৌধুরীর নামে একটি চেয়ার করতে পারলে ভালো হয়। তবে তিনি যেহেতু চট্টগ্রামের সেহেতু আমি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়কে বেশি গুরুত্ব দিব।

 

অধ্যাপক ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ইউসুফ চৌধুরীর কর্মকা- নতুন প্রজন্মের জানা উচিত। তাঁর নামে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ^বিদ্যালয়ে চেয়ার হতে পারে।

 

মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, এখন শক্ত হাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে স্পিরিট সেটা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে জোর দিতে হবে। আমি মনে করি চট্টগ্রামে যে দুটি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ইউসুফ চৌধুরী সাহেবের অবদান ছিল, সেই চুয়েট এবং সিভাসুতে ওনার নামে একটি করে চেয়ার স্থাপন করা হোক।

 

প্রফেসর ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, হালদা আন্দোলন বা হালদা গবেষণা, যেটাই বলেন তার আঁতুরঘর পূর্বকোণ। ইউসুফ চৌধুরী স্বীকৃতি পেলে চট্টগ্রামও স্বীকৃতি পাবে।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইউসুফ চৌধুরীর জীবনী নিয়ে বই হওয়া দরকার।

 

কবি শিশির দত্ত বলেন, স্বনির্ভর চট্টগ্রামের পেছনে যে মানুষটির অনন্য ভূমিকা, তাকে আমরা যথাযথ স্বীকৃতি দিতে পারিনি।

 

মীর মু. সাক্বী কাওসার বলেন, ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন সৃষ্টিশীল মানুষ। তার কারণে পুরো দেশ লাভবান হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ইউসুফ চৌধুরীকে যদি আমরা স্মরণ না করি তাহলে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের উন্নয়নকে ছোট করা হবে।

 

মাওলানা ওমর ফারুক বলেন, ইউসুফ চৌধুরীকে দিয়ে স্বনির্ভর চট্টগ্রাম নয়, স্বনির্ভর বাংলাদেশ বলতে হবে।

 

দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ববোধ যেমন ছিল তেমনি সমাজের প্রতিও আমার আব্বা ইউসুফ চৌধুরীর দায়বোধ ছিল অনুকরণীয়। আজকের এ গোলটেবিল সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আলোচকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট