একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড়। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে রোজার আগেই প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা প্রস্তুত রয়েছে। এই নিয়ে বড় ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে না নির্বাচন কমিশনের।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ সামান্য রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ উপজেলা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ইভিএমে নির্বাচন হলে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার হচ্ছে একটি। উপজেলা নির্বাচনে ব্যালট পেপার হবে তিনটি। তিনটি ব্যালট হওয়ায় সময়ক্ষেপণ বেশি হবে। তাই ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৪টির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৯ সালে। কয়েক ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৪ উপজেলার মধ্যে মিরসরাই, ফটিকছড়ি, সীতাকু-, সন্দ্বীপ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারী উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা শপথ নিয়েছিলেন ২৫ এপ্রিল। বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ। এরমধ্যে বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার চেয়ারম্যানরা শপথ নিয়েছিলেন ২৫ এপ্রিল। লোহাগাড়ার চেয়ারম্যানরা শপথ নেন ৯ এপ্রিল।
সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৪ অক্টোবর। শপথ অনুষ্ঠিত হয় ১৮ নভেম্বর।
শুধুমাত্র কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২ নভেম্বর। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শপথ নেন ১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পরিষদের প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ চট্টগ্রামে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হয়। সেই অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, গতবারের মতো এবারও কয়েক ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। মার্চ মাসে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
রোজার আগেই নির্বাচন :
আসন্ন রমজানের আগে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, দেশে উপজেলা পরিষদ আছে ৪৯৫টি। সবকটি উপজেলায় একসঙ্গে নির্বাচন হয় না। কয়েকটি ধাপে ভাগ করে নির্বাচন করা হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা, মার্চে রোজা ও এপ্রিলে ঈদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রোজার আগেই প্রথম ধাপের নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। উপজেলা ছেড়ে সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ছয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তারা হলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, সীতাকু-ের এসএম আলম মামুন, পটিয়ার মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাতকানিয়ার এম এ মোতালেব, চন্দনাইশের আবদুর জব্বার ও বাঁশখালীর চৌধুরী গালিব।
সংসদে তিন উপজেলা চেয়ারম্যান
উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিনজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে দুই জন দলীয় প্রতীক নৌকা ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। পটিয়ার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সীতাকু- উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ে জয়ী হয়েছেন।
পূর্বকোণ/আরআর