ক্বণনের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, শিল্পচর্চার প্রসার ঘটলে অশুভ কিছু স্থান করে নিতে পারে না। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য আজ নানাভাবে আক্রান্ত, ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। সবখানেই অশুভ কিছুর হানা চলছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নতুন প্রজন্মকে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চায় আত্ম নিবেদিত হতে হবে।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গনের ৩৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ক্বণনের সভাপতি আবৃত্তি শিল্পের শিক্ষক মোসতাক খন্দকারের সভাপতিত্বে ও শুভ্রা চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দেশবরেণ্য আবৃত্তিবিদ নাসিম আহমেদ, ভারতের বরেণ্য বাচিক শিল্পী কাজল সুর, দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী অধ্যাপক শায়লা আহমেদ এবং কোলকাতার জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী তমালী ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্বণন কার্যকরী পরিষদ সদস্য আবৃত্তি শিল্পী সৌভিক চৌধুরী।
পুরো অনুষ্ঠানটি দেশবরেণ্য কবি ও বাচিক শিল্পী আসাদ চৌধরীকে উৎসর্গ করা হয় এবং এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্যে প্রার্থনা করা হয়। এই অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরীকে উৎসর্গ করে ৩৮ বছর পূর্তি স্মারক প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আবৃত্তি একটি শিল্প। কবি যে অনুভব থেকে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কবিতা রচনা করেন, তা শ্রুতিমাধুর্যে, বাচিক শৈলিতে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেন আবৃত্তিশিল্পী।
অতিথিগণ ক্বণনের আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের আবৃত্তিকেন্দ্রিক কর্মযজ্ঞ যতো বেশি হবে, ততই অসুন্দর, আধিপত্যবাদী ভাবনা, বিভেদ, স্বার্থপরতা দূর হয়ে যাবে।
আলোচকগণ কবি আসাদ চৌধুরীকে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ৩৮ বছর পূর্তি এবং ৩৯ বছরে পদার্পণ উদযাপনের এই আনুষ্ঠানিকতায় খুব বেশি মনে পড়ছে এক বিশিষ্টজনকে, একজন খ্যাতিমানকে, একজন সম্পূর্ণ বুদ্ধিজীবীকে, একজন খ্যাতিমান কবি ও বাচিক শিল্পীকে। একজন অতুলনীয় মানবিক মানুষকে। তাঁর নাম আসাদ চৌধুরী। দেশবরেণ্য কবি, বাচিক শিল্পী, উপস্থাপক। এই মহান কবি ও শিল্পীকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর। ২০২২ সালের ১ এপ্রিল ক্বণনের ৩ যুগ পূর্তির অনুষ্ঠানই ছিল চট্টগ্রামে আতিথ্য ও অংশগ্রহণে আসাদ চৌধুরীর শেষ অনুষ্ঠান। তাঁকে ডাকলে আর পাবো না এ কথা ভাবতেই হৃদয় আর্তনাদ করে উঠছে। তিনি ছিলেন ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গনের নির্ভেজাল অভিভাবক, অকৃত্রিম সুহৃদ।
বক্তারা আরও বলেন, এ ধরনের আয়োজনে কলকাতা থেকে শিল্পীরা এ দেশে আসছেন, একই ভাবে এদেশের শিল্পীরাও সেখানে যাচ্ছেন। সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরো বেশি সুদৃঢ় হবে। শুধু আবৃত্তি কেন্দ্রিক একটি সংগঠন মনের তাগিদে ৩৮ বছর ধরে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা করে চলেছে। আশা করছি আগামীতেও তারা এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হবে।
আমন্ত্রিত অতিথি ও আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে আবৃত্তি পরিবেশন করেন নাসিম আহমেদ (ঢাকা), কাজল সুর (কোলকাতা), শায়লা আহমেদ (ঢাকা) ও তমালী ঘোষ(কোলকাতা)।
ক্বণন’র আবৃত্তি শিল্পীদের একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সৌভিক চৌধুরী, শরীফ মাহমুদ, প্রেমা চৌধুরী, শুভ্রা চক্রবর্তী, সুস্মিতা চৌধুরী এবং মোসতাক খন্দকার।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিগণ ক্বণনের ৭৪ তম কর্মশালা সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন। ক্বণনের শিক্ষার্থী শিশুসদস্যদের বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন- মেহজাবিন, সমৃদ্ধ, ইবরার, আলফি শাফিন, আলিশবা, জারিফ।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ