চট্টগ্রাম সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

সংঘাতের আশঙ্কায় শঙ্কিত ভোটাররা

চট্টগ্রামের ১০টি আসনে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ

মোহাম্মদ আলী

৪ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কারণে খেসারত দিতে পারে নৌকা প্রার্থী। তাতে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের অন্তত ১০টি আসনে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটারেরা। ভোটারদের সাথে কথা বলে নির্বাচনের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৭টি আসনে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র, দুইটি আসনে নাঙ্গলের সাথে স্বতন্ত্র এবং একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে স্বতন্ত্রের সংঘাতের আশঙ্কা দেখছেন ভোটাররা। ইতোমধ্যে দুইটি আসনে প্রচারণার সময়েও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

 

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সবচেয়ে ঝুঁঝিপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া)। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা)। কিন্তু নৌকা প্রতীক  না পেয়ে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, তার প্রতীক ঈগল। এ দুই প্রার্থী ঘিরে ইতোমধ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। নেতাকর্মীরা প্রচারণাও চালাচ্ছেন বিভক্ত হয়ে। ইতিপূর্বে প্রচারণা ঘিরে সংঘাতও হয়েছে একাধিকবার। এ কারণে পটিয়া আসনে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটারেরা।

 

চট্টগ্রামে সংঘাতের আশঙ্কা প্রবণ আরেক আসন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)। এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব, তার নির্বাচনী প্রতীক ঈগল। নির্বাচনে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরুসহ দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশিভাগ নেতৃবৃন্দ আবদুল মোতালেবের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

 

অপরদিকে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী কাজ করছেন নৌকা প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী’র পক্ষে। এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তার প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে। ভোটারেরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনে দুই প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে।

 

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। এ আসনে  আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী (নৌকা)। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান (ঈগল) ও  আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক)। এ আসনে এই তিনজনকে ঘিরে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে এ নিয়ে নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ভোটারেরা।

 

এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) ও চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর)  আসনের নৌকার প্রার্থী সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর রেষারেষি ক্রমশ বাড়ছে। তাতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনের দিন সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটারেরা। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী না দিয়ে জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তাতে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন সোলায়মান আলম শেঠ। কিন্তু তার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম (কেটলি) ও সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় কুমার চৌধুরী (ফুলকপি)। এ দুই প্রার্থীর ব্যানারে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাতে এ আসনেও সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।

 

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (লাঙ্গল)। তার সমর্থনে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু ব্যারিস্টার আনিসের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে মাঠে নেমেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী (কেটলি)। এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ দুই প্রার্থীকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাতে এ আসনে সংঘাতের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভোটাররা।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট