ফুরিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ক্ষণগণনা। আর মাত্র ৫ দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রচারণার শুরু থেকে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে প্রচারণায় উৎসবের আমেজ ছিল। এখন ভোটের দিন ঘনিয়ে আসতেই নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতা। এসব ঘটনায় আতঙ্ক ও শঙ্কা বাড়ছে ভোটারদের মধ্যে।
বর্তমানে ভোটের মাঠে আছে ১২৫ জন প্রার্থী। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ভোটে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ভোট ঘনিয়ে আসতেই বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে সংঘাতের বিষয়ে দলীয় প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জনগণ যাকে ভোট দেবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। আওয়ামী লীগের কেউ সংঘাত করলেও রেহাই নেই। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ছয়টি আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে শুরু থেকেই সংঘাত-সংঘর্ষ ও সহিংসতা ঘটনা লেগে ছিল। এরমধ্যে ছয়টি আসনে আসনে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছেন ভোটাররা।
মিরসরাই, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া আসনে সরেজমিন ঘুরে ভোটার-প্রার্থী ও দলীয় নেতা-কর্মীসহ কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। তাদের বেশির ভাগই ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা ও আতঙ্কের কথা বলেছেন।
প্রচারণার শুরু থেকেই তিনটি সংসদীয় আসনে সংঘাত-সহিংসতা লেগে রয়েছে। ভোট ঘনিয়ে আসতেই চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সহিংসতার ঘটনাও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম-১২ আসনে গত শনিবার বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর, হুইপের ভাই-বোনসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে বলে দাবি করেছে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হকের পক্ষ থেকে।
সহিংসতার বিষয়ে সামশুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তার প্রচারে হামলা চালাচ্ছে, গাড়ি ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি।’
গতকাল রবিবার এসব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, ‘বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করায় সংসদ সদস্যের উপর ক্ষুব্ধ রয়েছেন এলাকার মানুষ। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন এলাকাবাসী। নিজেরাই নিজেদের গাড়ি ভাঙচুর করে নৌকার সমর্থকদের মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে গত শনিবার বিকেলে প্রার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ। বেঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে কোনো বিরূপ পরিবেশ তৈরি হবে না। কোনো নাশকতার সুযোগ নেই। ভোটাররা নিরাপদে, নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে আসবে এবং ভোট দিয়ে চলে যাবে।’
কিন্তু পুলিশ সুপারের বৈঠকের ঘণ্টাখানেক পর বাঁশখালী পুঁইছড়ি ৬ নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমানের ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা লেগে রয়েছে। এসব ঘটনা উৎকণ্ঠিত ভোটার ও সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা লেগে রয়েছে। দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। সহিংসতার ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করে আসছেন দুই প্রার্থী।
১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে নির্ভার রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। তারা হলেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। ভোটের মাঠে খোশমেজাজে রয়েছেন এই চার প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনকে ঘিরে উত্তাপ রয়েছে ভোটের মাঠ। দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরীর মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগে রয়েছে।
পূর্বকোণ/এসি