সঠিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন কোনমতেই সম্ভব হবেনা! শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে নীতি-নৈতিকতা খুব জরুরি। এই বাস্তবতার আলোকে সুষম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও চরিত্রবান যোগ্য নাগরিক সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেবি আমান আলী রোড , চকবাজারে কর্ণফুলী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ (EIIN-134444) প্রতিষ্ঠা করা হয় যা বর্তমানে চট্টগ্রামে একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক মণ্ডলী : স্কুলের নির্বাহী পরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রফেসর মো: খায়রুজ্জামান জানান , মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য মেধাবী, দক্ষ, পরিশ্রমী ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকার বিকল্প নেই। উন্নত বিশ্বের আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির অনুকরণে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক Workshop ও Practise Teaching সহ আধুনিক পদ্ধতি, নবতর কলাকৌশল প্রয়োগ করে পাঠদান সহজতর, আকর্ষণীয় ও বিজ্ঞানসম্মত করার জন্য গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে এবং মাস্টার ট্রেইনার দ্বারা সৃজনশীল ট্রেনিং প্রদান করে শিক্ষকদের দক্ষতা ও কৌশল উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হয়।
২০২৩ সাল থেকে চালু হওয়া নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে সরকারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে আমাদের স্কুলের সকল শিক্ষকশিক্ষিকা।আমাদের শিক্ষকগণের কাছে নতুন কারিকুলামের প্রশিক্ষণ বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে এবং আমরা গত একবছর ক্লাসে অত্যন্ত সফলভাবে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছি।
গেলো বছরে প্রথম,৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পর এ বছর থেকে দ্বিতীয়,তৃতীয়, ৮ম ও নবম শ্রেণিতে নুতন কারিকুলামের প্রচলন হতে যাচ্ছে। নুতন এই শিখন কার্যক্রমকে সফল করতে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও পরেবেশ আমাদের স্কুলে রয়েছে। আশা করছি এ বছর গত বছরের চাইতেও উৎসাহ ও আনন্দের সাথে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পাঠকে উপভোগ করবে।
পাঠদান পদ্ধতি ও নতুন কারিকুলাম : এ প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ শিক্ষক অধ্যক্ষ সমরজিৎ্দাস বলেন, আমাদের এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ ক্লাস পরিচালনা করেন অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে। পাঠ উপস্থাপনের পর পঠিত বিষয়ের উপর রয়েছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। ফলে কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে তা ক্লাসেই পরিষ্কার হয়ে যায়। নানা শিখন উপকরণের সাহায্যে আনন্দময় পরিবেশে ক্লাসের পড়া মুখস্থ করে আদায় করা হয়। ক্লাসে যা বোঝা যায়নি সে বিষয়গুলো পুনরালোচনা করা হয়।
যেহেতু বর্তমানপাঠক্রম একটি দক্ষতা-ভিত্তিক পাঠ্যক্রম।তাই নতুন শিখন অভিজ্ঞতা অর্জন করাতে গিয়ে নতুন শিখন কৌশল রপ্ত করতে হয়েছে শিক্ষকদের।
খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসের পাঠ ক্লাসেই শেষ করতে পারে, যাতে করে বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক কমানো সম্ভব হয়,তাও নিশ্চিত করি আমরা। সবশেষে প্রায়োগিক দক্ষতা কতটুকু লাভ করলো তা মূল্যায়ন করেন অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ।আমাদের প্রতিটি ক্লাসে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকায় দলগত কাজ বা মূল্যায়ন সেশন কার্যকর ভাবে ফলপ্রসূ হয়।
নতুন এই শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভর লেখাপড়ার চর্চা থেকে বেরিয়ে আসবে শিক্ষার্থীরা । শিক্ষাক্রমে তথ্য মনে রাখার ক্ষমতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং তথ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার উপর। আমরা ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট তথ্য তুলে ধরি এবং প্রাসংগিক উপকরণ প্রদর্শন করি।দলগত কাজে হাতে কলমে বিভিন্ন প্রকল্প উপস্খাপনের মাধ্যমে যে কোন জটিল বিষয় অত্যন্ত উপভোগ্য ও সহজবোধ্য হয়ে ওঠে।
লেখাপড়ার মান বজায় রাখতে স্কুলে উপস্থিতির হার শতভাগ নিশ্চিত করা জরুরী। তাই আমরা প্রতিটি অভিভাবকের ফোন নম্বর সংরক্ষণ করে কোন ছাত্র ছাত্রী অনুপস্থিত থাকলে কারণ জানতে চেয়ে অভিভাবককে ফোন করি। ফলে আমাদের স্কুলে উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ। পাশাপাশি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত উপস্থিতি ,বাড়ির কাজসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে।
কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার : প্রগতিশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ও নিজেকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে কম্পিউটার জ্ঞান এর বিকল্প নেই। যার ফলস্বরূপ ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের রয়েছে অনলাইন সুবিধাসম্বলিত আধুনিক সুসজ্জ্বিত ও সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব।বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদেও জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ রসায়ন,জীব এবং পদার্থ বিজ্ঞান ল্যাব।
ডে-কেয়ার ব্যবস্থা : কর্মব্যস্ত অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রণহীন সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকের সন্তানদের গতিশীল, সমৃদ্ধ ও সুনিয়ন্ত্রিত লেখাপড়ার জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানে আছে সকাল ৮ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা। যেখানে তাদের ধর্মীয় অনুশাসন, স্কুলের যাবতীয় লেখপড়া পুনরায় প্রাইভেট টিচারের মাধ্যমে বিষয় ভিত্তিক বুঝানো, শেখানো ও আদায় করার ব্যবস্থাসহ মানসম্মত টিফিন, নাস্তা ২ বেলা ও দুপুরের খাবার ও ইনডোর ও আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা থাকবে।
আবাসিক ব্যবস্থাপনা : এ প্রসঙ্গে হোস্টেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন,উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সুশৃঙ্খল জীবনের বিকল্প নেই। তাই, শৃঙ্খলা ও পারিবারিক আবহের সমন্বয়ে আমরা হোস্টেল অর্থাৎ আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বন্দোবস্ত করেছি উন্নত শিক্ষাপদ্ধতি,নিয়মানুবর্তিতা প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য মাসিক হেলথ চেক আপ, নিয়মিত ব্যায়াম, মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য নামাজ ও কোরআন শিক্ষা,অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব-স্ব ধর্মীয় অনুশাসন, চিত্ত বিনোদনের জন্য ইনডোর ও আউটডোর গেমস এবং ত্রৈমাসিক দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন। মানসম্মত খাবার সরবরাহে আমরা আপোষহীন। সার্বক্ষণিক শিক্ষকমণ্ডলী ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের দ্বারা কোচিং ক্লাস পরিচালনার মাধ্যমে পরিচালিত হবে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত বিনির্মাণের পথ নির্দেশক এই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা।
সহ পাঠক্রমিক কার্যাবলী : ছাত্র ছাত্রীদের মানসিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনোদনমূলক কর্মকান্ডের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্কুল শুরু হয় নিয়মিত প্রাত্যহিক সমাবেশের মাধ্যমে। তাদের সামগ্রিক বিকাশ এবং সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে সঙ্গীত, আবৃত্তি, বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অভিভাবক সমাবেশ, শিক্ষা সফর, আবাসিক ছাত্রদের আউটিং, ক্লাস পার্টিসহ জাতীয় দিবস সমূহের সাড়ম্বর আয়োজন।
এইভাবেই শিশুদের বোধগম্য পদ্ধতিতে আন্তরিক পাঠদান, প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাধারা, কঠোর শৃঙ্খলায় সু-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিগত এক যুগ ধরে চট্টগ্রামবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং প্রতি বছর বেসরকারী বৃত্তি পরীক্ষায় প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীর বৃত্তি লাভ এবং এসএসসি পরীক্ষায় এ+ সহ শতভাগ পাশ করার মত কৃতিত্ব অর্জন করেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিস্তারিত জানতে ধুনির পুল,কেবি আমান আলী রোড, চকবাজার এই ঠিকানায়, karnaphuli public school & college ফেইস বুকে এবং ০১৯১৭-৭০৬৩১১,০১৮৪৮-৩৪৩৮৮৮ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে ।
পূর্বকোণ/এসি