গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়াতে কাজ করছে ওয়াসা। একই সাথে নগরীতে আগামী ৩০ বছরের চাহিদা মেটাতে একটি মাস্টার প্ল্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকও সম্মতি দিয়েছে। মাস্টার প্ল্যানের ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ওয়াসার গণশুনানি ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ একথা বলেন।
গণশুনানিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) বিষ্ণু কুমার সরকার, ওয়াসার সচিব শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
শুষ্ক মৌসুমে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার বিষয়ে প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ওয়াসার পানি মূলত দুইটি নদী থেকে তোলা হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পানির স্তর কম থাকে। অন্যদিকে সমুদ্রের নোনা পানি ওপরে উঠে আসে। ফলে লবণাক্ততা বাড়ে। প্রাকৃতিক এসব সমস্যার কারণে মিষ্টি পানির সংকট হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া এ সংকট সধাধানে আরও একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া রয়েছে। পাশাপাশি কাপ্তাই লেকে ড্রেজিং করার প্রস্তাব দেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়াসার জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত দোকান চালু করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি টিম তদন্ত করে গেছেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পানি নেই কিন্তু বিল আসে প্রতিমাসে, চট্টগ্রাম ওয়াসার গণশুনানিতে দক্ষিণ খুলশী এলাকার সরদার বাহাদুর লেইনের বাড়ি মালিক নোমান-ই আলম খান অভিযোগ করে বলেন, সরদার বাহাদুর লেইন এলাকার অনেক বাসিন্দার কাছে পানি না থাকার পরও বিল হওয়ায় সেগুলো জমে বিভিন্ন জনের কাছে লাখ টাকাও বকেয়া হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তার বাড়িসহ বেশকিছু বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার পুরনো লাইনে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রতি মাসে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা বিল করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি জানান, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় যেখানে বসবাস করেন সেখানে ওয়াসার নতুন লাইন স্থাপন করা হয়নি।
এ গ্রাহকের অভিযোগের জবাবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ জানান, বেশিরভাগ জায়গায় জাইকার পাইপ স্থাপন করা হলেও কিছু কিছু জায়গায় করা সম্ভব হয়নি। নতুন প্রকল্পে সেসব এলাকায় কয়েক মাসের মধ্যে নতুন লাইন স্থাপনের আশ্বাস দেন তিনি।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল্লাহ আরো বলেন, ‘পানি না পেলেও লাইন চার্জ হিসেবে একটি ফি দিতে হয়, এটা পানির বিল না। বিষয়টি ওয়াসাকে জানালে তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবে। সরদার বাহাদুর লেইনে কয়েক মাসের মধ্যে ট্যাঙ্ক স্থাপন করে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, রেলওয়ের সাথে কথা হয়েছে সেখানে ট্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য জায়গাও পাওয়া গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ নেই দাবি করে ফজলুল্লাহ বলেন, যদি কোনো স্থানে দুর্গন্ধযুক্ত পানি যায় তাহলে নমুনাসহ অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় চট্টগ্রাম ওয়াসায় অনিয়মের পরিমাণ অনেক কম। আমাদের দরজা খোলা আছে, যেকোনও সময় যে কেউ আমাদের কাছে আসতে পারে। আমার কাছে এসে যদি কেউ প্রতিকার না পায়, তাহলে বলার সুযোগ থাকে আমি দুর্নীতিতে জড়িত আছি। কিন্তু আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি। এ সময় ওয়াসার চলমান ও সদ্য শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ওয়াসার সেবার মান বাড়বে বলে তিনি জানান।
সভায় ওয়াসার এমডি দাবি করেন, ২০০৯ সালে ৩৭ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২ কোটি লিটার। বর্তমানে ৪৮ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি লিটার।
তিনি জানান, ওয়াসার পানি উৎপাদন ব্যবস্থা আইএসও সনদ পেয়েছে, যেটি বাংলাদেশে আর কোনো সংস্থার নেই। পানির গুণগত মান ঠিক রাখতে প্রতিমাসে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ২৪০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও ওয়াসার বাস্তবায়িত, বাস্তবায়নাধীন এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ