চট্টগ্রাম শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

অভিযোগের তুলনায় সুরাহা কম

বিধি লঙ্ঘন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রচারে বাধা, ক্যাম্প ও গাড়ি ভাঙচুর, ভয়-ভীতি দেখানো অভিযোগ বেশি। এমনকি ভোটে মাঠের সন্ত্রাসীদের ব্যবহারের অভিযোগও জমা পড়েছে ইসিতে।

 

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন ১২৫ জন। এরমধ্যে ১২টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জোট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। মিরসরাই, সন্দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী-এই ছয়টি আসনে ভোটের আগে থেকেই প্রকাশ্যে বিরোধ চলে আসছে। প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর বিরোধের পারদ দাউ দাউ করে জ¦লে উঠছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র জমা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অন্তত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে।

 

গত রবিবার ঢাকা নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় কিছু জায়গায় স্থানীয়ভাবে মামলা হচ্ছে। তবে নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে এখনো কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত হয়নি। সব জায়গায় কঠিন বার্তা দেওয়া হচ্ছে, আচরণবিধির বিষয়ে দেখতে হবে। কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’

 

গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া অন্তত ২০টি অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়। তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগ অভিযোগ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ দলীয় ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে। প্রচারে বাধা, ক্যাম্প ভাঙচুর ও সহিংতার অভিযোগ বেশি।

 

অভিযোগগুলো ঘেঁটে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এবং স্বতন্ত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবকে ঘিরে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। দুই প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা, ভয়-ভীতি দেখানো, ক্যাম্প-গাড়ি ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেবের বিরুদ্ধে রিয়াজউদ্দিন বাজারে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ করেছেন। এমপি নদভীর বিরুদ্ধে মোতালেব একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। তার একটি হল, এমপি নদভী মোতালেবের বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছে। এছাড়াও তার কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।

 

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির তদন্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। এছাড়াও মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা-সমাবেশ করা ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধান কমিটি এসব অভিযোগে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনের সুপারিশ করেছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

 

এছাড়াও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। ইসি সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার ও ভয়-ভীতি দেখানোর একটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। এজন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান।

 

নগরের চট্টগ্রাম-১০ ও ১১ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে রঙিন পোস্টার, ব্যানার সাঁটানোর অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম।

 

চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন। আবার গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুহেল। পরস্পরের বিরুদ্ধে কর্মী-সমর্থকদের মারধর, ভয়-ভীতি দেখানো ও টাকা বিলানোর অভিযোগ করেছেন দুই প্রার্থী।

 

মনোনয়ন জমাদানের দিন থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছিলেন বেশির ভাগ প্রার্থী। দলীয় প্রতীক থাকায় আগে-ভাগেই মাঠে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছিলেন দলীয় প্রার্থীরা। বিভিন্ন প্রার্থীদের দলীয় ও ঘরোয়া সভা-সমাবেশের চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রার্থী ও সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রথম থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরবর্তীতে বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানান নির্বাচন বিশ্লেষকেরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি-সংবাদ প্রকাশের পর এবং বিভিন্ন প্রার্থীদের অভিযোগের তদন্ত করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। অনসুন্ধান কমিটি বিভিন্ন প্রার্থীদের ডেকে সতর্ক ও ব্যাখ্যা তলব করেছেন। এসব বিষয়ে তদন্ত করে কমিশনে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। তবে বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া এ পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তেমন কোনো কঠোর শাস্তির উদ্যোগ নেয়নি কমিশন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট