চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও’

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ অক্টোবর, ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও। খামে ভরে তুলে দিও আঙুলের মিহিন সেলাই। ভুল বানানেও লিখো প্রিয়। বেশি হলে কেটে ফেলো তাও। এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও।’ কবি মহাদেব সাহার মতো প্রিয় মানুষের হাতে লেখা চিঠি পাওয়ার এমন আকুতি সবার মনে থাকলেও এসএমএস, ফেসবুক, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ প্রযুক্তির যুগে চিঠি এখন আসেই না!

 

ফলে অতীতের মতো আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় না। প্রেমের চিঠি আসেনি বলে, রানারের পথ চেয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় না। পরিচিত হাতের লেখার মিষ্টি গন্ধ আর আবেগের সেই চিঠি আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। পাল্টেছে যুগ। এখন মন খারাপ কিংবা মিস করতে দেরি। কিন্তু ফোনটা হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কল করে, মনের কথা জানাতে দেরি নেই।

 

ইন্টারনেটের যুগে কে চায় কষ্ট করে চিঠি লিখতে- এমনটাই মনে করেন এ সময়ের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। তাদেরই একজন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদ হোসেন। এ তরুণ পূর্বকোণকে বলেন, এখন ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিংবা কিবোর্ডের শব্দগাঁথুনিতে এক নিমিষে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। চিঠির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা এখন কেবলই বই-পুস্তকের গল্পেই সীমাবদ্ধ।

 

নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য মাস্টার্স শেষ করা নাজিয়া রহমান বলেন, যান্ত্রিক এ জীবন থেকে আবেগগুলো কোথায় যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বসন্ত আজও নামে। তবে সেটার মাধ্যমটা বদলে গেছে। চিঠির এই বিরল যুগে মোবাইল ফোনেই সেরে ফেলা যাচ্ছে সব কাজ। আজকের পরিচয়ে কালকেই কত সহজে একটা মাত্র ফোন কলে দেখা হয়ে যাচ্ছে। সব কিছুই এখন প্রযুক্তির হাতে।

 

তবে তরুণদের এ ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত শিক্ষক আমির উদ্দিনের। তার ভাষ্য- আমরা চিঠির যুগ, প্রযুক্তির যুগ- দুটোই দেখেছি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিঠি হাতে এলে মনের মধ্যে যে আবেগ কাজ করতো- এখন মুহূর্তে ইনবক্সে মেসেজ পেলে সেটি কাজ করে না। এদিক থেকে আমরা ভাগ্যবান। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা চিঠি পাওয়া বা দেওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত।

 

তিনি বলেন, বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে সুকান্ত ভট্টাচার্যের রানার হয়তো ছুটি পেয়েছে। তবুও চিঠি লেখার অনুভূতিটা যেন আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে না যায়। ভালোবাসার মানুষের জন্য নীল কাগজে লেখা চিঠি তো মাঝে মাঝে দেওয়াই যায়। চিঠির সেই সুদিন আবার ফিরে আসুক। আমাদের ডাকঘর গুলো আবার প্রাণ ফিরে পাক।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট