তিন বছরের ব্যবধানে বাজারে দেশি-বিদেশি আট জাতের ফলের দাম বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ফলগুলো হচ্ছে মাল্টা, কমলা, আপেল, নাশপাতি, ডালিম, আঙ্গুর এবং দেশি ড্রাগন ও ডাব। ডলার সংকটের অজুহাতে গত বছর থেকে বাড়তে শুরু করে ফলের দাম। কিন্তু বর্তমানে দেশে ডেঙ্গুজ্বর ও ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। এ কারণে বাজারে এসব ফলের চাহিদা আরো বেড়ে গেছে। এ সুযোগকে নতুন করে কাজে লাগিয়ে চলতি বছর কয়েক দফা দাম বেড়েছে এসব জাতের ফলের। এমনটাই অভিযোগ ক্রেতাসাধারণের।
কদমতলীর ফলমণ্ডির চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, মূলত ছয় কারণে দেশের বাজারে ফলের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে প্রায় সাত জাতের ফলই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এসব ফলগুলো হচ্ছে- আপেল, মাল্টা, কমলা, নাশপাতি, ডালিম, আঙ্গুর ও নাগফল। ব্যবসায়ীরা বলছেন- বিদেশি ফল আমদানিতে ডলার সংকটের কারণে এলসি পাওয়া যাচ্ছে না। যা গত বছর থেকেই চলমান। বিদেশ থেকে যে পরিমাণ ফল আসছে তা ভোক্তাদের চাহিদার তুলনায় কম। ডলারের দাম বাড়ায় অনেক আমদানিকারক ফল আমদানি করতে পারছে না। প্রতি কেজি ফল আমদানিতে সরকারি ট্যাক্স দিতে হয় ৮৯ টাকা এবং বন্দর ও এজেন্ট খরচসহ ১০০ টাকা খরচ পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ফলের মৌসুম না হওয়ায় সেখানেও দাম চড়া। আবার সারাদেশে ডেঙ্গু ও ভাইরাসজনিত জ্বরের কারণেও ফলের চাহিদা বেড়ে গেছে।
মূলত এসব কারণে বাজারে ফলের দাম বেড়েছে। এদিকে, বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেড এবং ইর্য়াডে আমদানি করা ফল বোঝাই সারিসারি কন্টেইনার আছে। বাজার কিংবা আমদানি করা ফলের কোনো সংকট নেই বললেই চলে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের জুলাই এবং আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মাল্টা, ১৪ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন আপেল ও ১৯ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন অন্যান্য ফল আমাদনি হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, কাস্টমস হাউস চট্টগ্রামের মাধ্যমে প্রতি বছর যে পরিমাণ ফল আমদানি হয় এবছরও প্রায় সে পরিমাণ ফল আমদানি হয়েছে। বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আমদানিকারকরা ফলের কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফলের দাম দুই-তিনগুণ বাড়িয়েছে। গতকাল (সোমবার) সরেজমিনে খুচরা বাজারে দেখা যায়, বিদেশি ফল কমলা ও মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩০০- ৩৫০ টাকায়, আকারে ছোট আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, আকারে বড় আপেল ২৫০ টাকায়, আঙ্গুর ৫০০-৫৫০ টাকায়, ডালিম ৪৫০ টাকায়, নাশপাতি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি ফলের মধ্যে প্রতি পিস ডাব ১০০- ১১০ টাকায়, ড্রাগন ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০২১ সালে ফলের দাম :
তিন বছর আগে এসময় কমলা, মাল্টা গড়ে বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকায়, আপেল ১৫০ টাকায়, ডালিম ২০০-২৫০ টাকায়, আঙ্গুর ২৭০- ২৮০ টাকায়, নাশপাতি ২০০- ২৫০ টাকায়, ড্রাগন ২০০- ২২০ টাকায় ও ডাব ৭০- ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। খুচরা বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ফলে গড়ে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি দাম বেড়েছে।
নগরীর বৃহত্তম ফলের আড়ত কদমতলীর ফলমণ্ডি এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, তিন বছর আগে আমদানি করা ফলের মধ্যে বিভিন্ন জাতের ফল প্রতি কার্টন (১৫ কেজিতে এক কার্টন) বিক্রি হয়েছে তিন হাজার থেকে ৩৫শ’ টাকার মধ্যে। কিন্তু এখন দাম বেড়ে সেই ফল পাইকারিতে প্রতি কাটন (১৫ কেজি) মান ভেদে ৩৫ শ’ থেকে ৩৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু ফল চার হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, গতকাল ফলমণ্ডির পাইকারি বাজারে মাল্টা, কমলা প্রতিকেজি ২৪০- ২৫০ টাকায়, আকারে ছোট আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, বড় আপেল ২০০ টাকায়, আঙ্গুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, নাশপাতি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া দেশি ফলের মধ্যে ড্রাগন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুল আলম বলেন, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না। আগে দিনে ২০ থেকে ২৫ কন্টেইনার ফলের গাড়ি এখানে ঢুকতো। সেটি এখন কমে পাঁচ থেকে ১০ কন্টেইনার হয়ে গেছে। একারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে ফল কম। তাই দাম বেড়েছে। তবে খুচরায় পাইকারির চেয়ে দামের পার্থক্য ৫০ থেকে ৮০ টাকার বেশি দেখা যায়।
এবিষয়ে বহদ্দারহাটের খুচরা বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পাইকারিতেও ফলের দাম বেশি। আবার পরিবহন খরচ বেড়েছে, দোকান ভাড়া বেড়েছে, এছাড়া অনেক ফল পচে যায়। তাই খরচ মেটাতে হিসাব করে দাম নির্ধারণ করা হয় খুচরায়।
পূর্বকোণ/আরডি