জনবল সংকটে চট্টগ্রাম জেলা ও ১৫ উপজেলা মৎস্য অফিস। অর্ধেক শূন্য পদেই চলছে মৎস্য অফিসগুলো। তাতে জেলার পুকুর ও দিঘির মৎস্য চাষে যথাযথ তদারকি করা যাচ্ছে না। এমন কি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে পদে পদে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে আইন বাস্তবায়ন, তদারকি, চিংড়ি উৎপাদনকারী সংগঠন তৈরি, পোনা অবমুক্ত, মৎস্য চাষে পরামর্শ প্রদান, প্রদর্শনী খামার তৈরি, সচেতনমূলক সভা, মৎস্য খামার যান্ত্রিকীকরণ, হ্যাচারিতে মানসম্পন্ন রেণু উৎপাদন, প্রশিক্ষণ প্রদান, মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আয়বর্ধক উপকরণ বিতরণ, মৎস্য খাদ্যের উপকরণ তৈরিতে লাইসেন্স প্রদান, মৎস্য খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা, সেমিনার-ওয়ার্কশপ করাসহ মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসগুলো।
উপজেলাগুলোতে জনবল কাঠামোর আওতায় পাঁচটি করে পদ রয়েছে। একজন সিনিয়র অথবা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা মৎস্য অফিস পরিচালিত হয়। তার অধীনে থাকেন একজন করে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং অফিস সহায়ক। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে উপজেলা মৎস্য অফিসগুলোতে নিয়মিত কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারের জনবল কাঠামোর আওতায় চট্টগ্রাম জেলা ও ১৫ উপজেলা মৎস্য অফিসে মোট পদ সংখ্যা ১১২টি। কিন্তু তার বিপরীতে লোকবল রয়েছেন মাত্র ৫৮ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ৫৪টি পদ। উপজেলাগুলোতে জনবল কাঠামোর আওতায় পাঁচটি করে পদ রয়েছে। বর্তমানে ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া ও কর্ণফুলী উপজেলা মৎস্য অফিসারের পদ খালি রয়েছে। এসব উপজেলায় সহকারী মৎস্য কর্মকর্তারা উপজেলা মৎস্য অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। জনবল সংকটের কারণে উপজেলা মৎস্য অফিসগুলোতে নিয়মিত কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।’
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে সাধারণত চার পদ্ধতিতে বেশিরভাগ মৎস্য চাষ হয়। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে- সনাতনী, আধা নিবিড়, নিবিড় ও উন্নত নিবিড়। চট্টগ্রামে চার পদ্ধতিতে মৎস্য চাষকৃত সবগুলো পুকুর ও দিঘির আয়তন হচ্ছে ২১ হাজার ২২১ হেক্টর। তাতে বার্ষিক মোট মাছ উৎপাদন হয় ৬৯ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সনাতনী পদ্ধতিতে (প্রতি হেক্টরে বার্ষিক মাছ উৎপাদন হয় দেড় মেট্রিক টন) ৬ হাজার ৪৫০ হেক্টর আয়তনের পুকুর-দিঘিতে মৎস্য চাষ হয়। তাতে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় ৯ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন। আধা নিবিড় পদ্ধতিতে (প্রতি হেক্টরে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় কমপক্ষে ৪ মেট্রিক টন) মৎস্য চাষ হয় ১২ হাজার ৯১৫ হেক্টর আয়তনের পুকুর-দিঘিতে। তাতে বার্ষিক ৪৭ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। নিবিড় পদ্ধতিতে (প্রতি হেক্টরে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় কমপক্ষে ৪ থেকে ১০ মেট্রিক টন) ১ হাজার ৭৭৬ হেক্টর আয়তনের পুকুর-দিঘিতে মৎস্য চাষ হয়। তাতে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় ১১ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। উন্নত নিবিড় পদ্ধতিতে (প্রতি হেক্টরে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন হয় ১০ মেট্রিক টনের বেশি) মৎস্য চাষ হয় ৮০ হেক্টর আয়তনের পুকুর-দিঘিতে। তাতে বার্ষিক ১ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে মৎস্যচাষে তদারকি বাড়াতে পারছে না মৎস্য অফিস।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, একটি উপজেলায় কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ হাজার পুকুর ও দিঘি থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় এসব পুকুর ও দিঘি যথাসময়ে তদারকি করা যায় না। অথচ উপজেলা কৃষি ও পশু সম্পদ বিভাগেও ইউনিয়ন ওয়ারি ব্লক সুপার ভাইজার রয়েছে। কিন্তু মৎস্য বিভাগে তার উল্টো চিত্র। ইউনিয়ন ওয়ারি কোন কর্মী দূরের কথা উপজেলা মৎস্য অফিসেও প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। তাতে অফিসের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
পূর্বকোণ/আরডি