নগরীর বাটালি হিল এলাকায় রেলওয়ের ৭৬৫/ই বাসাটি বরাদ্দ রেলকর্মী সরাফত উল্লাহ রাজিবের নামে। তবে এই বাসায় থাকেন না তিনি। গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন এক ব্যবসায়ীকে। বরাদ্দ পাওয়া বাসা আইন ভেঙে অন্যজনকে ভাড়া দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি রাজিব। কোয়ার্টারের সামনের খালি জায়গায় এখন নির্মাণ করছেন আরেকটি গোডাউন।
জানা গেছে, বাটালি রোডের পাশে ৭৬৫/এ, ৭৬৫/বি, ৭৬৫/সি, ৭৬৫/ডি, ৭৬৫/ই এবং ৭৬৫/এফ নামে রেলকর্মীদের জন্য ৬টি টিনশেড কোয়ার্টার আছে। এরমধ্যে কোনো কোয়ার্টারেই বরাদ্দপ্রাপ্ত রেলকর্মীরা থাকেন না। এসি মেরামত কারখানা, এলপিজি সিলিন্ডারের গোডাউনসহ নানা কাজে ভাড়া দিয়েছেন। মো. শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি এসব তদারকি করেন।
বরাদ্দ পাওয়া কোয়ার্টার অন্যজনকে ভাড়া দেওয়া ছাড়াও সামনের খালি জায়গায় দোকান-গোডাউন নির্মাণ করেন রেলকর্মীরা। এসব দোকান-গোডাউনের জন্য প্রথমে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অফেরৎযোগ্য মোটা অংকের অগ্রিম টাকা নেন তারা। কিছুদিন পর তাদের উঠিয়ে দিয়ে ফের আরেকজনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেওয়া হয়।
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ অভিযান চালিয়ে রেলকর্মীদের বানানো অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন ফের কোয়ার্টারের সামনের খোলা জায়াগায় গোডাউন তৈরি করা হচ্ছে। এ নিয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্থানীয়রা চিঠি দিলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রেলের জমিতে রেলকর্মীদের এই ‘জমিদারির’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর চিঠি দিয়েছেন জামশেদ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি। চিঠিতে সরেজমিন তদন্তপূর্বক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে জড়িত রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। ভূ-সম্পত্তি বিভাগকেও এই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
জামশেদ উদ্দীন পূর্বকোণকে বলেন, ৭৬৫/ই বাসাটি রেলকর্মী সরাফত উল্লাহ রাজিবের নামে বরাদ্দ। এই বাসার সামনে অবৈধভাবে বানানো একটি দোকান মোটা অংকের অগ্রিম টাকা দিয়ে মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া নিই আমি। গত বছর উচ্ছেদের সময় সে দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার অগ্রিম টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এখন উচ্ছেদ করা জমিতে ফের গোডাউন বানাচ্ছেন রাজিব। মোটা অংকের অগ্রিম টাকা নিয়ে আরেকজনকে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। এভাবে রেলকর্মীদের লোভের বলি আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দোকান ভেঙে দেওয়ায় আমার ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। চার সন্তান নিয়ে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। কিন্তু রেলকর্মীদের লোভ বাড়ছেই।
জামশেদ উদ্দীনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিওএস দপ্তরের অফিস সহকারী সরাফত উল্লাহ রাজিবের মুঠোফোন নম্বরে (….২০২০৮৪) কল দেওয়া হয়। পূর্বকোণের প্রতিবেদক পরিচয় পাওয়ার পর ‘রং নম্বর’ উল্লেখ করে সংযোগ কেটে দেন তিনি।
বাটালি হিল এলাকায় রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টারের ভাড়া বাণিজ্যে অভিযুক্ত মো. শাহজাহান পূর্বকোণকে বলেন, কোয়ার্টারের সামনের জায়গায় একটি দোকান নিয়েছিলাম অনেক আগে। গত বছর ভেঙে দেওয়ার পর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। সম্প্রতি রাজিব নতুন করে গোডাউন করছেন। আমাকে ভাড়া নিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি নিইনি।
রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা শহিদুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে তা অন্যজনকে ভাড়া দেওয়া বেআইনি। রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাটালি হিলে যারা একাজ করছেন- তাদের বিষয়ে জিএম স্যারের কাছে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। স্যার যেভাবে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব।
পূর্বকোণ/আরডি