চট্টগ্রাম শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ক্যাম্পের আগুন পরিকল্পিত, দাবি রোহিঙ্গাদের

টেকনাফ সংবাদদাতা

১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৩৪ অপরাহ্ণ

টেকনাফে নয়াপাড়া মুছনী রেজিস্টার ক্যাম্পের জি-২ ব্লকে বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ও নাশকতামূলক বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গারা।

এ বিষয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত মুছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি-২ ব্লকের মাঝি ওমর ফারুক বলেন, রাতে আমার ঘরের পাশ থেকে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠে। খুব দ্রুত সব ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার আগে আমাদের ব্লকের অনেকের ঘরের বাইরে দরজা কে বা কারা বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে বোঝা যায় কেউ ইচ্ছে করে ক্যাম্পে আগুন লাগিয়েছে। কয়েকদিন আগে থেকে ক্যাম্পে আগুন লাগানো হবে বলে অনেক রোহিঙ্গা শুনেছেন বলে আমার কাছে দাবি করেছে।

সরেজমিনে আশ্রয় শিবির ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফে নয়াপাড়া পুড়ে যাওয়া খোলা আকাশে বসে আছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। বিকেল হওয়ার সাথে সাথে শীতে সেখানে বসে কাঁপছে তারা। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের ওপর বসে কান্না করছিল রোহিঙ্গা নারী মারিয়া খাতুন।

 

‘আমার কেউ নেই। একমাত্র সম্বল ঘরটিও আগুনে পুড়ে গেল। ঠান্ডায় রাতে কীভাবে ঘুমাব। কোনো শীতবস্ত্র নেই। খাবার নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই জোটেনি এখনও। দিনে পোড়া ঘরের ওপর বসে থাকছি, রাত হলে কোথায় যাবো। সকালে শুধু এনজিও সংস্থার দেয়া শুকনো বিস্কুট খেয়ে আছি’।

ঠিক এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রোহিঙ্গা নারী মরিয়াম। কক্সবাজার টেকনাফ নয়াপাড়া মুছনী রেজিস্টার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আয়েশা সিদ্দিকা (৫) নামে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ১০০ বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছে মরিয়ামের মতো ৫০০ মানুষ।

আগুনে পুড়ে নিহত শিশুর বাবা ইব্রাহিম বলেন, আগুন লাগার সাথে সাথে সবাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ি। এরপর মেয়েকে আর খুঁজে পায়নি। পরে জানতে পারি মেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আগুন ধরেনি, ইচ্ছে করে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ছৈয়দ নুর বলেন, ক্যাম্পের কিছু লোক বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড করে। ভাগাভাগিতে গরমিল হলে তখন ক্যাম্পে এসে আমাদের উপর নির্যাতন করে। এদের থেকে বাঁচতে আমরা ৩০-৪০ জন মিলে রাতে আমাদের ক্যাম্প পাহারা দিয়ে থাকি। কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প থেকে লোকদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। আমরা একজন সন্ত্রাসীকে ধরে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছি। এরপর গত তিনদিন আগে ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। সেটি এখন বাস্তবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ক্যাম্পে আগুন ধরেনি, আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মোহাম্মদ কাউসার সিকদার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক বসতঘর ও নানা স্থাপনা ভস্মীভূত এবং এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য এপিবিএন পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

 

টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ (যুগ্মসচিব) আবদুল হান্নান বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে দাতা সংস্থা। খুব দ্রুত নতুন ঘরে ঢুকতে পারবে। তাদের প্রাথমিকভাবে শীতের কম্বল, শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল দেওয়া হচ্ছে। আগুন লাগার ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে।

পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট