চট্টগ্রাম বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ার প্রভাব

ফিশারি ঘাট সড়ক ভাঙনের হুমকিতে

সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, রাঙামাটি

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ৯:০৪ অপরাহ্ণ

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে (কর্ণফুলী হ্রদে) পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে রাঙামাটি শহরের ফিশারি ঘাট সংযোগ সড়ক বাঁধ।

সড়ক বাঁধটির ওপর হালকা ও ভারী সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। অতিরিক্ত চাপ ও কম্পনের কারণে যেকোন সময় সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কায় রাস্তার উপর লাল পতাকা টাঙিয়ে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। সড়ক বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে গাছের বল্লি ও বালির বস্তা ফেলে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

জানা যায়, ১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাইয়ে বাঁধ দিলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। এ স্থানে স্থাপিত হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ হ্রদ ঘেরা রাঙামাটি জেলা সদর শহরে যাতায়াতের জন্য বনরূপা, রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ি তিনটি এলাকাকে সংযোগ করতে ৬৬৩ মিটার দৈর্ঘের বাঁধের মাধ্যমে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। বর্ষায় কাপ্তাই হ্রদের পানিপ্রবাহ বেড়ে পানির উচ্চতা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন হ্রদের পানি প্রায় সংযোগ সড়ক বাঁধের উচ্চতার কাছাকাছি চলে আসে। এতে পানির তোড়ে প্রতি বছর রাস্তার দুইপারের বিভিন্ন স্থানে ভাঙতে থাকে। এতে সড়কের যে অংশে ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে বল্লি বেড়া দিয়ে প্রতিরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে সড়ক বিভাগ।

এদিকে রাঙামাটি জেলা শহরের ফিশারি ঘাট থেকে ট্রাক টার্মিনাল পর্যন্ত নির্মিত ওই বাঁধটি শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাঁধটি রাঙামাটি শহরের দুটি অংশকে সংযুক্ত করে রেখেছে। আর প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ওই সড়ক সংযোগ বাঁধের উভয় পাশে জ্বালানি কাঠ মজুদ রাখা ও মালামাল ওঠানামাসহ পরিবহন শ্রমিকদের গাড়ি ধোয়া-মোছার কারণে ভাঙন ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে লক্ষ করা যায়, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত কান্ট্রিবোট, ট্রলার, নৌকায় মালামাল ওঠানামা, গাড়ি পার্কিং করা হয়ে থাকে। এতে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে গেলে রাঙামাটি শহরের দুই অংশে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ি এলাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াতও বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, জনস্বার্থে রাঙামাটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের ফিশারি ঘাট থেকে ট্রাক টার্মিনাল পর্যন্ত বাঁধে লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত কান্ট্রিবোট, ট্রলার, নৌকায় মালামাল ওঠানামা না করার জন্য নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও মানছে না কেউ। রাঙামাটি জেলা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগের ২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ৫ হাজার ৪৭০ মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৭ হাজার ৭৩৫ মিটার ড্রেন, ধস প্রতিরোধক কংক্রিট ঢালাই ৭২ হাজার ১৫০ বর্গমিটার। এর মধ্যে ৫ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং ওয়াল হবে ৫১টি স্পটে, ৬ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং ওয়াল হবে ৭৩টি স্পটে ও ৭ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং ওয়াল হবে ২৭টি স্পটে। পাইল ফাউন্ডেশনের দৈর্ঘ্য ১২-১৮ মিটার। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও বাঁধটির পুরো অংশের কাজ হয়নি।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, তখন যে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি হয়েছিল, সেটার ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই প্রকল্পে জেলার অনেক জায়গায় কাজ হয়েছে। সেখানে যতটুকু চাহিদা আছে, আমরা তার পুরোপুরি করতে পারি নাই। ফিশারি ঘাট বাঁধকেও গুরুত্ব দিয়ে শুরু করা হয়েছে, যদিও পুরো কাজ করা সম্ভব হয়নি এখনো। প্রকল্পে সংশোধনী এনে আমরা বাঁধের উত্তর দিকটা পুরোটাই করার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী শুষ্ক মৌসুমে বাকি অংশের কাজ শুরু করতে পারবো। আপাতত বাঁধের যে অংশে অতিমাত্রায় ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে বল্লি দিয়ে ধারক দেয়াল দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাঁধটি একদিকে যেমন শহর রক্ষা ও সড়ক সংযোগ স্থাপন করেছে, অন্যদিকে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়েছে বহুগুণ। পর্যটন শহর রাঙামাটিতে প্রবেশ করতেই ফিশারি ঘাট সংযোগ সড়ক মুগ্ধ করে পর্যটক ও পথচারীদের। রাঙামাটি শহরবাসীর কাছেও এ স্থানটি খুবই প্রিয়। প্রতিদিনই এ সড়কে শহরবাসীদের ঘুরতে আসতে দেখা যায়। এর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে বল্লি ঘেরাবেড়ার কাজ করলেও তাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ার কারণে ভাঙন বেড়ে বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে মাটি সরে যাচ্ছে। এতে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট