চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ কাটছে না বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

২ মার্চ, ২০২৫ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

চলতি মার্চ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আলটিমেটাম দিয়ে বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, এর ব্যত্যয় হলে দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন তারা।

 

সংস্কারের অজুহাত কিংবা অন্য কোনও বাহানায় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন পিছিয়ে নেওয়ার গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে বিএনপির এই আলটিমেটাম দিয়েছেন দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক নেতাদের অন্যতম সালাহউদ্দিন আহমেদ।

 

গতকাল শনিবার ঢাকার এক পুস্তক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ইনিয়ে-বিনিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় কথা না বলে দেশে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভোটের রোডম্যাপ জানান। সংস্কার প্রস্তাবের দোহাই দিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ ফেলে রাখার কারণ নেই।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দিন চারেক আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ডিসেম্বেরর মধ্যেই ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্ত তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে পরবর্তি বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচনের কথা জানান।

 

গতকাল শনিবারও প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। আর, তারা সংস্কার চাইলে বাড়তি আরও তিন মাস সময় লাগতে পারে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে এবং সেভাবেই সরকার এগুচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

গত শুক্রবার বেশ কয়েকটি জেলা থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিবহন সংগ্রহ করে ঢাকায় মানুষ জড়ো করে জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের দল গঠনের পরের দিনই বিএনপির এমন আচমকা হুমকীর রহস্য খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের পরেই সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানায় নতুন দল এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

 

বিএনপির আশঙ্কা, নতুন দলের গণপরিষদ ও স্থানীয় নির্বাচনের দাবি এবং সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয়টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র। গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান থাকার পরও গণপরিষদ প্রয়োজন কেন? সালাহউদ্দিনের সন্দেহ, যারা এসব প্রশ্ন সামনে এনেছেন, হয় তারা না বুঝেই করেছেন অথবা গভীর ষড়যন্ত্র যুক্ত আছে এর পেছনে। এ প্রসঙ্গে অবশ্য গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, সরকার যেহেতু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে চায় সেহেতু কোনও রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সব দলই সরকারের চোখে সমান।

 

এদিকে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের আভাস- সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি মহল চাইছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের মামলাগুলির মধ্যে কয়েকটির সাজা ঘোষণার পরেই ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে। সেক্ষেত্রে, আগামী জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্তত একটি মামলা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আদালতের রায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা অথবা এ দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বেশ কয়েকবার এমন আভাসই দিয়েছেন। গতকালও সিলেটের এক অনুষ্ঠানে তাজুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিশেষ মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। এরপর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হবে।

 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিও এ দিন আবার সামনে নিয়ে এসেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকলে চব্বিশের এর গণঅভ্যুত্থানের পথ রচিত হতো না। বিএনপি জানতো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গিয়ে স্বৈরাচার হয়ে উঠবে। বিএনপি এটাও জানতো আওয়ামী লীগের পতন হবে।

 

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যদি আওয়ামী লীগ আবার এদেশে রাজনীতির সুযোগ পায় সেটা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। শুধু পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করলে হবে না, এদেরকে সমন্বিতভাবে বিতাড়িত করতে হবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট