গেল জানুয়ারি মাসে দেশে ৬৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৭ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে; যার প্রায় অর্ধেক মারা গেছেন বাইক দুর্ঘটনায়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে সোমবার এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে ২৮৯ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩০১ জন নিহত হয়েছেন; যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩.৮৫ শতাংশ এবং নিহতের ৪৪.৪৬ শতাংশ।
এছাড়া ১৫৬ বাস দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন, ১৬৩ ব্যাটারিচালিত-ইজিবাই-নসিমন-অটোরিকশা-মাহিন্দ্রা দুর্ঘটনায় ১৩৯ জনের প্রাণ গেছে।
এই এক মাসে রেলপথে ৫৭টি দুর্ঘটনায় ৫৯ জন এবং নৌ-পথে ১৬টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
অর্থাৎ, সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৭৩২টি দুর্ঘটনায় ৭৫৪ জনের নিহত হওয়ার তথ্য এসেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে।
সমিতি বলছে, দেশের ৯৬টি সংবাদমাধ্যমের তথ্য সঙ্কলন করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩১১ জন চালক এবং ২১৯ জনই পথচারী রয়েছেন। এছাড়া ৪ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন আনসার সদস্য, ২ জন বিজিবি সদস্য, ২ জন সাংবাদিকও মারা গেছেন।
জানুয়ারিতে দুর্ঘটনায় পড়েছে মোট ১০৩২টি যানবাহন, যার ৩১.২৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.৮৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৭.৯২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ইজিবাইক-নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ১৬.৫৭ শতাংশ বাস।
বেপরোয়া গতি; বিপদজনক ওভারটেকিং; সড়কের নির্মাণ ত্রুটি; ফিটনেসবিহীন যানবাহন; চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা; চালকের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা; পরিবহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব; চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার; মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো; অরক্ষিত রেলক্রসিং; রাস্তার উপর হাট-বাজার; ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা; ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্নীতি; ট্রাফিক আইন অমান্য করা; সড়কে চাঁদাবাজি; চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সেজন্য সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।
১. দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা।
২. দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা।
৩. সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা।
৪. সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করা।
৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৬. গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্টা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮. গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো।
১০. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া।
১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা।
১২. সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উঁচু করা।
১৩. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সাথে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ