চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

মে-জুনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত হবে, আশা বিএনপির

অনলাইন ডেস্ক

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৩৬ অপরাহ্ণ

আগামী মে-জুন মাসের মাঝেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হবে বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘মূলত তারা এই মুহূর্তে কী কার্য্ক্রম করছে, জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি কী—এই বিষয়গুলো নিয়েই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সব কিছু আলাপের পর তাদের কথায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আগামী মে মাস-জনু মাসের মধ্যে তারা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হবেন, ভোটার তালিকা আপগ্রেড করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে।’

 

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব কথা জানান। বিকাল সাড়ে ৩টায় নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা ২২ মিনিট পর্যন্ত বৈঠকের পর বিএনপির নেতারা সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমান মাসুদ, বেগম তহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। বৈঠকে নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদও বৈঠকে ছিলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন তাদের নেই। কারণ দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইন হলো… আপনারা জানেন আরকি, একটা সরকার পদত্যাগ করলে তার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা… এটা আইন।’

‘কিন্তু এখন তো ওই আইনে দেশ চলছে না। তাই না! এই মুহূর্তে তাহলে পলিটিক্যাল কনসেনসাসের ভিত্তিতে সরকারের তরফ থেকে অনুরোধ হতে হবে এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। তবে আমরা এতটুকু বুঝেছি যে যদি মে-জুন মাসের মধ্যে পূর্ণ প্রস্তুতি থাকে, তাহলে প্রাসঙ্গিক আর কোনও সমস্যা থাকলে—সেটি দূর করে খুব দ্রুতই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।’

 

আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জেনেছি যে তারা তাদের কমিশনের পক্ষ থেকে একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, তারা কবে কী করবেন… এটা খালি তাদের বলা না, এটা দেশের সংবিধান অনুযায়ী, প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কিছু বিধান আছে যে জানুয়ারির ২ তারিখের মধ্যে অটোআপগ্রেড হওয়ার কথা এবং মার্চের ২ তারিখে এসে এটা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তারপরও আরও কিছু কার্য্ক্রম আছে…, (ইসি) এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

 

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে যেটুকু জানলাম যে প্রায় ৩০ লাখ নতুন ভোটার আগামী দিনে যুক্ত হবেন, যেগুলো বাদ পড়েছিল… তাদের আগে ভোটার করা হয়নি। আর এই সময়ে নতুন ভোটার যারা হবেন, তারা এখন ভোটার হবেন না… তারা ১৮ বছর পূর্ণ হবেন আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি… কাজেই ওটা হিসাবে না। হিসাব হলো বাদ পড়া ছিল প্রায় ৩০ লাখ ভোটার, তারা তালিকায় যুক্ত হবেন। আর এর মধ্যে যে ১৫ লাখ মারা গেছেন, তারাও বাদ পড়বেন। আলটিমেটলি ১৫ লাখ ভোটার বিদ্যমান তালিকায় যুক্ত হওয়ার কথা।’

 

তিনি বলেন, ‘তবে এরপরও আরও কিছু যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনারা জানেন যে যারা মারা গেছেন সেই তালিকা করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের মৃত ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে।’

 

‘আমরা সবাই জানি, দেশের বহু জায়গায় বহু মানুষ, তারা মারা যাওয়ার পরে ইউনিয়ন পরিষদে রেজিস্ট্রেশন করেন না। অর্থাৎ ই্উনিয়ন পরিষদের রেজিস্ট্রেশনে তাদের নাম নাই। কিন্তু আসলে মারা গেছেন তারা। এগুলো অনুসন্ধান করার কাজ চলছে বলে আমাদের কমিশন জানিয়েছে।’

 

নির্বাচনের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বলা হবে

কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে এর কোনও আভাস পাওয়া গেছে কিনা, প্রশ্ন করা হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘না। আমি তো বললাম, নির্বাচনের ঘোষণা তো ওনারা করতে পারেন না। কারণ সংবিধানের নরমাল নিয়ম অনুযায়ী সেই নির্বাচন হচ্ছে না।’

 

আপনারা কমিশনের কাছে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও প্রস্তাব দেইনি। আমরা তো ওনাদের কাছে এটা বলবো না।’

 

‘যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দায়িত্ব এখন সরকারের… তারপরে শিডিউল ঘোষণা তো কমিশনই করবে। আপনারা জানেন যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আমাদের আলোচনা আছে, সেখানে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।’

 

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে আপনারা সন্তুষ্ট কিনা—এরকম প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, ‘ওয়েল। আইন অনুযায়ী তাদের যা করার কথা, আমরা বুঝতে পারছি তারা সঠিকভাবে সেটি করছেন।’

 

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেখুন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সরকার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করবে, সেটি করে যদি সিদ্ধান্তের আলোকে আইনের পরিবর্তন হয়, বা বিধানের পরিবর্তন হয়—তাহলে সেটি নির্বাচন কমিশনকে মানতে হবে।’

 

কিন্তু প্রশ্ন হলো যে সেটি তো এখনও হয়নি। নির্বাচন কমিশন বলেছিল যে নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব করেছে, তাতে কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে…। এই বিষয়ে তারা কিছু আলোচনা করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এটা তো তাদের ব্যাপার, সেটি তারা বলবেন।’

 

‘আমরাও যদি মনে করি যে সংস্কার কমিশনের কোনও প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে অন্তরায়, এটা নির্বাচন কমিশন কেন, আমরাও বাধা দেবো। কিন্তু এই বিষয়টা তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় না। এটা তো কোনও কোলাবরেশনের ব্যাপার না… তাদের মতামত তারা বলবেন, আমাদের মতামত আমরা বলবো।’

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট