চট্টগ্রাম রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্যান্সার জয় করে স্বাভাবিক জীবনে

ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) সহজে নিয়ন্ত্রণ ­­­ এবং নিরাময়যোগ্য

ইমাম হোসাইন রাজু

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

‘২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। বয়স মাত্র ২০ পেরিয়েছে। চুয়েটে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। একদিন হঠাৎ ডান পায়ে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। সাধারণ ব্যথার মতোই ছিল। চিকিৎসকের কাছে গেলে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয়া হয়। তাতে ধরা পড়ে ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) রোগ।

 

 

এটি রক্তের ক্যান্সারেরই একটি ধরন। শুরুর দিকে এ বিষয়ে জানতাম না। পরবর্তীতে যখন জানতে পারি, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। এরপরই শুরু হয় বেদনাদায়ক আরেক অধ্যায়। টানা এক বছর জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে মুক্তি মিলে এই অভিশাপ থেকে।’

 

এভাবেই ব্লাড ক্যান্সারে (সিএমএল) আক্রান্ত হওয়ার শুরুর ও মুক্তি পাওয়ার দিনগুলোর কথা বলছিলেন প্রকৌশলী রাজশ্রী রঞ্জন  বড়ুয়া । যিনি গত ১৯ বছর ধরে কেবল ওষুধ সেবন করেই সুস্থ জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি ব্যাংকে। ২০১২ সালে বিয়েও করেছেন। সংসার জীবন থেকে শুরু করে পেশাগত সময়, সবকিছুই অন্য দশজনের মত স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন তিনি।

 

রাজশ্রী রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘দেশ-বিদেশ কোথাও বাকি ছিল না যেখানে যাওয়া হয়নি। ২০০৬ সালে ভারতের একজন চিকিৎসক বলেছিলেন বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে। সবশেষ চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. গোলাম রাব্বানী স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করি। ওনার তত্ত্ববধানে চিকিৎসা গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন অসুবিধা হয়নি। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে সুস্থ আছি।’

 

চিকিৎসকরা জানান, ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল হলো রক্তের এক ধরনের ক্যান্সার। এটি দীর্ঘমেয়াদি ও ধীরগতির রোগ। তবে ক্যান্সার শুনেই ভয়ের কিছু নেই। এই রোগের চিকিৎসা আছে এবং নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগী স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে। বাংলাদেশে সিএমএল রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াদের প্রায় ৩০ শতাংশই ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল রোগী।

 

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অডিটর হিসেবে কাজ করেন সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা আব্দুল কাদের। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পর ২০১৯ সালের মার্চে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার (সিএমএল)। তাও আবার বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মাথায়। নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন তিনি। চার বছর বয়সী একটি সন্তানও রয়েছে তাঁর।

 

আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রথম দিকে ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু করি। নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি ওষুধ সেবন করে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছি। কোন অসুবিধা হয়নি। তবে রোগীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।’

 

চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন, এক সময় বøাড ক্যান্সার অত্যন্ত জটিল এবং মারণ রোগ ছিল। তবে সময় বদলেছে। বর্তমান সময়ে কোন রোগীর যদি ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে, তা হলে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। ব্লাড ক্যান্সারের একটি ধরন হচ্ছে ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল। এটি সহজে নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাময়যোগ্যও। সিএমএলের রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্ববধানে থাকলে এবং নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এ রোগের চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে এর চিকিৎসা রয়েছে।

 

খবর নিয়ে জানা গেছে, আব্দুল কাদের ও রাজশ্রী রঞ্জন বড়ুয়ার মতো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল আক্রান্ত শতাধিক রোগী বর্তমানে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। যারা শুধুমাত্র ওষুধ ব্যবহার করেই সুস্থ রয়েছেন। যদিও ওষুধের দাম কিছুটা বেশি, তবে পূর্বের চেয়ে খরচ কিছুটা কমানো হলেও এখনো তা সবার জন্য সহজলভ্য নয় বলে জানান রোগী ও চিকিৎসকরা। তাই ওষুধের দাম সহজলভ্য করার তাগিদ রোগীদের।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট