চট্টগ্রাম সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

চসিক-সিডিএ’র ‘গাফিলতি’ খতিয়ে দেখছে দুদক
নালায় পড়ে শিশু নিহতের ঘটনার স্থান গতকাল পরিদর্শন করে দুদক

খালে পড়ে শিশুর মৃত্যু

চসিক-সিডিএ’র ‘গাফিলতি’ খতিয়ে দেখছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ এপ্রিল, ২০২৫ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

উন্মুক্ত নালায় রিকশা পড়ে শিশু সেহরিশের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোনো গাফিলতি আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সিডিএ চট্টগ্রাম নগরীর ৩৬ খাল ও ড্রেনের সংস্কার করছে। গতকাল রবিবার দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম প্রথমে সিডিএ ভবন এবং এরপর টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।

 

সিডিএ ভবনে দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি খালে পড়ে একটি বাচ্চা মারা গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএর এক্ষেত্রে কোনো দায়দায়িত্ব আছে কি না, মূলত আমরা সেটি যাচাই করছি। আমরা সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট আরও যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

 

তিনি আরো বলেন, যে হিজড়া খালে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, সেই খালে সিডিএ মাত্র কাজটা শুরু করেছে। কাজটা এখনো শেষ হয়নি, চলমান আছে। যেসব খালের কাজ উনারা সম্পন্ন করেছেন, সেগুলোর তীরে উনারা রেলিং দিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা সরেজমিনে গিয়ে সেটা দেখব। যেখানে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, সেখানেও আমরা যাব। আমরা প্রকল্পের যে নকশা পেয়েছি, সেখানে রেলিংয়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু তারা কতটুকু কাজ করেছে, সেটা সরেজমিনে গিয়ে দেখব। তবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি সেটা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

 

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, দুদকের নিয়মিত একটা পর্যবেক্ষণ থাকে। শুধু সিডিএ নয়, তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময় যায়, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে, এটা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ। সে হিসেবে দুদকের একটি টিম আমাদের এখানে এসেছিল। আমরা যে জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি করছি, সেই প্রকল্পের বিষয়ে তারা কিছু তথ্য আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রকল্প পরিচালক উনাদের সবকিছু জানিয়েছেন।

 

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিডিএর ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ চলছে, এটা সেনাবাহিনী করছে। সিডিএ সেখানে সমন্বয়ের কাজ করছে, মন্ত্রণালয় থেকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। যে খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে খালটির কাজ আমরা এখনো শুরু করিনি। পর্যায়ক্রমে খালের কাজ শুরু হচ্ছে। যেসব খালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সবগুলো খালেই আমরা প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রকল্প অনুযায়ী সবগুলোতে দেড় থেকে দুই ফুট করে রেলিং দেওয়া আছে। আমরা বিষয়টি দুদককে জানিয়েছি।

 

দুদক টিমের পরিদর্শনের পর চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা এসেছিলেন। খালে পড়ে একটা শিশু যে মারা গেছে, সে বিষয়ে উনারা জানতে চেয়েছেন। সিডিএ ৩৬টা খাল খননের কাজ করছে। হিজড়া খালটা কিন্তু আমরা তাদের কাছে হ্যান্ডওভার করে দিয়েছি। উনারা সেখানে কাজ শুরু করেছেন।

 

তিনি আরো বলেন, আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সেখানে খাল ও নালার পাড়ে বাঁশের রেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। দুর্ঘটনার একদিন কিংবা দুইদিন আগে সিডিএ কিংবা যারা কাজ করছেন, তাদের কাজের জন্য এস্কেভেটর নামাতে গিয়ে বাঁশের রেলিংটা ভাঙতে হয়েছে। এরপর দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা এসব বিষয় উনাদের কাছে পরিষ্কার করেছি।

 

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলায় হিজড়া খালসংলগ্ন নালায় যাত্রীবাহী একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পড়ে যায়। ব্যাটারিচালিত রিকশায় মায়ের কোলে ছয়মাস বয়সী শিশুসহ তিন যাত্রী ছিলেন। বাকিরা উদ্ধার হলেও শিশুটি তলিয়ে যায়। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর শিশু সেহেরিশের লাশ মেলে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খালে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

সম্পর্কিত পোস্ট