১৫ বছর পর জনবল নিয়োগের জট খুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময়ে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে সেবা প্রার্থীদের। মামলা জটিলতায় ২০১০ সালের পর থেকে সিডিএ কোন জনবল নিয়োগ দিতে পারেনি। তবে ২০১০ সালের পর সিডিএ’র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জনবল নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
কাজের পরিধি ও সিডিএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা বাড়লেও উল্টো কমেছে জনবল। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না সেবাপ্রার্থীরা। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে সিডিএ থেকে ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ জনবল নিয়োগের ক্ষমতা ফেরত পেয়েছে সিডিএ। তবে এখন নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে। সেটি পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম।
এনাম কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সিডিএ’র জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোয় মোট পদের সংখ্যা ছিল ৫২০টি। পরবর্তীতে সাংগঠনিক কাঠামোর ৫২টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। আবার সৃজন করা হয় ৫১টি পদ। সেই হিসেবে সিডিএ’র অনুমোদিত মোট পদের সংখ্যা ৫১৯টি। তবে বর্তমানে মোট ১৯৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণির ৫৮টি পদের মধ্যে ১৮টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪৭টি পদের মধ্যে ১০টি, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৪১টি পদের মধ্যে ৬৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ২৭৩টি পদের মধ্যে ১০২টি পদ শূন্য রয়েছে।
সিডিএ’র একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ১৯৮৪ সালের অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) দিয়ে এখনো সিডিএ চলছে। বর্তমানে সিডিএ’র কার্যক্রম ও কাজের পরিধি বাড়লেও উল্টো কমেছে লোকবল। অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন ও জনবল নিয়োগের জন্য সিডিএ’র পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে নতুন অর্গানোগ্রাম আলোর মুখ দেখেনি। এর পিছনে সিডিএ’র কিছু ‘অসাধু কর্মকর্তা’ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এক সময় সিডিএ নিজেই জনবল নিয়োগ দিতে পারলেও পরবর্তীতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী লোকবল নিয়োগও দিয়েছে। কিন্তু সিডিএ ৪১ বছর আগের অর্গানোগ্রাম দিয়ে চলছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিডিএতে জনবল নিয়োগ হয়নি। সিডিএ’র অগ্রানোগ্রাম অনুযায়ী প্রায় ২০০ পদ খালি রয়েছে। একটা সময়ে সিডিএ নিজে জনবল নিয়োগ দিতে পারতো। তবে পরবর্তীতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়।
লোক নিয়োগের ক্ষমতা সিডিএ’র উপর ন্যস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, গত মাসে লোক নিয়োগের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় থেকে সিডিএ’র উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আগে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে ছিল, যা গতমাসে সিডিএ’র উপর ন্যস্ত করা হয়। শূন্য পদে আমরা জনবল নিয়োগ করতে পারবো। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্র লাগে, আমরা ওই ছাড়পত্র নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাড়পত্র পাবো। ছাড়পত্র পাওয়ার সাথে সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবো।
তিনি আরো বলেন, এরপর আমরা ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) মিটিং করবো। ডিপিসির মাধ্যমে আমরা দেখবো কারা কারা পদোন্নতি পাবে। ইন্টার্নাল পদোন্নতি দেয়ার পর শূন্য পদগুলোতে আমরা একত্রে নিয়োগ দিব।
প্রয়োজনে অগ্রানোগ্রাম পরিবর্তন করা হবে জানিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিডিএ যেসব কাজ করছে তাতে আমাদের প্রায় দেড় হাজার জনবলের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের লোকবলের সংখ্যা অনেক কম। প্রথম ধাপে জনবল নিয়োগের পর অগ্রানোগ্রাম পরিবর্তন করে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নিব।
যে কারণে জনবল আটকা: ২০১০ সালে সিডিএতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে সিডিএ’র সাবেক এক কর্মকর্তা এই নিয়োগের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার সংযুক্ত বাদী হয়েছেন স্টোনোগ্রাফার হাবিবুর রহমান। মামলাটি দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২১ সালে খারিজ হয়। জনবল নিয়োগের জন্য আদালত সিডিএ’র পক্ষে রায়ও দিয়েছিল। কিন্তু সেসময় জনবল নিয়োগে সিডিএ কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হেমায়েত হোসেন। সিডিএ’র এক সভায় জনবল নিয়োগের জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি কেন এবং জনবল নিয়োগের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার পরও কেন নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি সিডিএ তা জানতে চান তিনি।
পূর্বকোণ/ইব