চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

চকবাজারে হানাদার বাহিনীর সাথে ৪ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ হয় : আবদুস ছালাম

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১০ মার্চ, ২০২৫ | ১:৪৯ অপরাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছালাম বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করার একদিন পর আমরা ৮ম বেঙ্গল মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর শওকত, ক্যাপ্টেন অলি আহমদসহ ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৪-৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমাদের গ্রুপে ১শ জন সেনা সদস্য ছিল।

 

যাওয়ার পথে চকবাজারের বর্তমান অলি খাঁ মসজিদের দক্ষিণ পাশে যাওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের গতিরোধ করে। তখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সদস্যরা প্রবর্তক থেকে চকবাজার পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে অনেক যানবাহন নিয়ে অবস্থান করছিল। তাদের সাথে দীর্ঘ চার ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ হয়। তখন আমরা তাদের সাথে না পেরে বিভক্ত হয়ে পিছনে সরে পড়ি।

 

আমাদের একটি গ্রুপ বান্দরবান হয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কালুরঘাট ব্রিজ অতিক্রম করি। হঠাৎ করে কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে আমাদেরকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হানাদার বাহিনীর লোকেরা আমাদেরকে লক্ষ্য করে অতি শক্তিশালী আর্টিলারি নিক্ষেপ করে। বোমাটি সঠিকভাবে কাজ না করায় আমরা মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাই।

 

বোমাটি যখন আসছিল তখন ক্যাপ্টেন অলি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন। তিনি অনেক লম্বা থাকায় তাকে বাঁচানোর জন্য আমি টান দিয়ে বসিয়ে দেই। কালুরঘাট ব্রিজে আক্রমণ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে আবার বিভক্ত হয়ে ক্যাপ্টেন অলিসহ ৪টি গাড়ি নিয়ে আরকান সড়ক হয়ে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমাদের কাছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ছিল।

 

রাতে বান্দরবান গেলে এক বিত্তশালী আমাদেরকে রাতে আশ্রয় দিয়ে খেতে দেন। কিন্তু তিনি ছিলেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর। সেটা আমরা জানতাম না। তিনি আমাদেরকে খাবার খেতে দিয়ে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করে হানাদার বাহিনীর লোকজনকে খবর দেন। ওই এলাকার একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বিষয়টি জানতে পেরে আমাদেরকে জানান।

 

তখন ক্যাপ্টেন অলিসহ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত্রিবেলা পাহাড়ের মধ্যে চলে গিয়ে রাতে পাহাড়ের ঝোঁপঝাড়ে অবস্থান নেই। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন অলির নির্দেশে আমরা একটি অংশ ভারতে প্রবেশ করি। সেখানে বাঙালি মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব নেই। প্রতিটি গ্রুপকে অস্ত্র চালানো, শত্রু মোকাবেলা করার কৌশল শিখিয়ে দিয়ে তাদেরকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য দেশে পাঠিয়ে দেই।

 

প্রতিরাতে সীমান্ত পেরিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে হানাদার বাহিনীর উপর গেরিলা হামলা করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আশুগঞ্জের হানাদার বাহিনীর একটি বড় ক্যাম্পে আমরা মেশিনগান ও কামানের সাহায্যে হামলা চালাই। এতে বেশকিছু পাক সেনা হতাহত হয়। তবে আমাদের মধ্যে অনেকে আহত হয়েছিল। তাছাড়া তাদের বেঁচে থাকা এক হাজারের অধিক সেনা সদস্য আমাদের নিকট পরদিন আত্মসমর্পণ করে।

 

ওই সময় আশুগঞ্জের আশপাশের লোকজন আমাদের প্রতিদিনের খাবারসহ বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করেছিলেন। এর কয়েকদিন পর দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে দেশে চলে আসি। স্বাধীনতার এক মাস পর পুনরায় চাকরিতে যোগদান করে ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ করি।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট