চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

বাজারে ধানের দাম বেশি, অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

আমন সংগ্রহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ মার্চ, ২০২৫ | ২:৩৪ অপরাহ্ণ

আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। শুধু সন্দ্বীপ ও ফটিকছড়ির কৃষকেরা সরকারকে ধান দিয়েছে। ফড়িয়া পর্যায়ে ধানের দাম বেশি থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি সরকার।

 

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, চট্টগ্রামে ধান উৎপাদন কম। এছাড়াও সরকারের চেয়ে বেসরকারি পর্যায়ে ধানের দাম বাড়তি রয়েছে। তাই কৃষকেরা এবার সরকারের চেয়ে বেসরকারি পর্যায়ে ধান বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন।

 

চলতি আমন মৌসুমে সরকার চট্টগ্রাম থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ হাজার ৮১৮ টন। এর বিপরীতে ধান সংগ্রহ হয়েছে ২৮৬ দশমিক ৬৮০ টন। যা দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। এরমধ্যে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ থেকে ২৫৬ দশমিক ৬৮০ টন। ফটিকছড়ি থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৩০ টন।

 

নগর ও জেলার অন্য উপজেলায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেননি কৃষকেরা। কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। উৎকোচ ছাড়া ধান নিতে চায় না। তাই কৃষকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কৃষক যাতে ধানের ভালো দাম পায়। কৃষক ধানের ভালো দাম পাচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য অনেকটা পূরণ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ধান উৎপাদন কম। তাই সরকার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সন্তোষজনকভাবে অর্জন করতে পারেনি।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। চলতি আমন মৌসুমে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনেছে প্রতিকেজি ৩৩ টাকা দরে। আতপ চাল কিনছে ৪৬ টাকা দরে। সিদ্ধ চাল ৪৭ টাকা দরে।

 

বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের চাষি কুমকুম দাশ বলেন, ‘ধানের ওজনে কারচুপি ও আর্দ্রতার নামে ৩০-৪০ শতাংশ বাদ দেওয়া হয়। এতে কৃষকের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। বকশিশের নামে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এরচেয়ে দাম ভালো থাকায় ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ধান বিক্রিতে করেছে চাষিরা।’

 

চাল সংগ্রহ : ধান সংগ্রহ হতাশাজনক হলেও চাল সংগ্রহে সন্তুষ্ট খাদ্য বিভাগ। সিদ্ধ চালের ৮০৮ টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৭০৪ টন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ধান-সিদ্ধ চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আতপ চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। আতপ চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ হাজার ৪৭৩ টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬,৫০৬ দশমিক ২০৯ টন।

 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে।’

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিলার বলেন, চার-পাঁচজন মিলার ছাড়া বেশিরভাগ মিলের নামে চাল দিয়েছেন চাক্তাই চালপট্টির এক ব্যবসায়ী। বাজারে ধান ও চালের দাম বাড়তি থাকায় বেশিরভাগ মিলার চাল বিক্রিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তবে সরকারের কাছে চুক্তিমতো চাল না দিলে সরকার লাইসেন্স বাতিল করে দেবে। এ সুযোগে ওই চাল ব্যবসায়ী অধিকাংশ মিলারের সরবরাহ অর্ডারপত্র নিয়ে একাই চাল বিক্রি করেছেন। সরকারের কাছে বিক্রি করা চালের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মিলাররা। দুই মিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বকোণকে বলেন, সরকারের কাছে বিক্রি করা চালগুলোর মান ভালো নয়। কারণ বাজারের চালের দাম বাড়তি। সরকারি দরে চাল দিতে গেলে মিলারদের লোকসান গুনতে হবে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট