চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু : টোলের টাকা দিতেই ঘণ্টা পার

নাজিম মুহাম্মদ

৭ মার্চ, ২০২৫ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বৃহস্পতিবার বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন চালক আবদুল হালিম। লোহাগাড়ার আমিরাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫৫ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে নগরীর শাহ আমানত সেতুর কাছে আসতে পৌনে দুই ঘণ্টা সময় লাগে তার। তবে এক কিলোমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যরে শাহ আমানত সেতু পার হতেই এই বাস চালকের লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা সময়।

 

শুধু আবদুল হালিম নন- তার মতো সবারই শাহ আমানত সেতু পার হতে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে সেতুর টোল পোস্টে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মাঝে মাঝে সেতুর দক্ষিণ অংশ থেকে শুরু করে মইজ্জ্যার টেক পর্যন্ত যানজট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক জনভোগান্তির কারণে খরস্রোতা কর্ণফুলীর উপর নির্মিত শাহ আমানত সেতু দিন দিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দুঃখ হয়ে উঠছে।

 

পার্বত্য জেলা বান্দরবান, পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলার মানুষ চলাচল করে শাহ আমানত সেতু দিয়ে। স্বাভাবিকভাবে ১২-১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও পর্যটন মৌসুমে এই সংখ্যা দুই-তিনগুণ বেড়ে যায়। এর বাইরে রয়েছে মোটরচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য। এতে শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজা পার হতে একটি গাড়িকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করতে হচ্ছে। অপ্রতুল লেন আর ধীরগতির টোল আদায়ের কারণে এই ভোগান্তি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

গতকাল বিকাল তিনটার সময় সরেজমিনে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর টোল পোস্টের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সেতুর দক্ষিণ পাশে কথা হয় বাসচালক হারুনুর রশিদের সাথে। তিনি জানান, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়কে গাড়ি চালাচ্ছি। আগে এতো যানজট ছিলো না। সাম্প্রতিক সময়ে সেতুর টোল পোস্টের যানজটে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হচ্ছে।

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ির চাপ বেড়েছে। দৈনিক গড়ে ২৫ হাজার যানবাহন সেতুর টোল পোস্ট অতিক্রম করছে। আগে টোলের টাকা নেয়া হতো ম্যানুয়ালি। এখন অটোমেশনে টাকা নেয়া হচ্ছে। টোল পোস্ট পার হতে পুরো গাড়ির তথ্য সংরক্ষিত হচ্ছে। এতে টোল পোস্ট এলাকা পার হতে প্রতিটি গাড়ি পাঁচ-আট মিনিট সময় নিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি চালকরা ভাঙতি টাকা দেয় না। ১০০, ২০০ এবং ৫০০ টাকার নোট দিয়ে থাকে। ভাঙতি টাকা দিতে গিয়েও সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

 

বাড়ানো হচ্ছে দুটি লেন:

২০১১ সালে নির্মিত কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় এখন দুই পাশে চারটি করে আটটি বুথ (চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে যেতে চারটি বুথ এবং চট্টগ্রাম শহরে আসার দিকে চারটি বুথ) রয়েছে। এই দুই পাশে আরও একটি করে দুটি লাইন বাড়বে। তখন উভয় পাশে টোল আদায়ের বুথের সংখ্যা ১০টি হবে। এখন মাঝে মধ্যে যে যানজট দেখা যাচ্ছে তখন সেটি আর থাকবে না এমনটি আশা করা হচ্ছে।

 

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর টোল প্লাজা সংলগ্ন অ্যাপ্রোচ রোডে আরসিসি রোড নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে চার কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ২৫৯ টাকা ৫৫৬ পয়সা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ১৮০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

এই ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে টোল প্লাজা এলাকায় দুই পাশে চারটি করে মোট আটটি বুথ রয়েছে। তারপরও প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার যানজট সৃষ্টি হয়। নতুন করে দুই পাশে দুটি লেন বাড়ানো হলে উভয় পাশে বুথের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি।

 

ইটিসিতে টোল দিলে বাঁচবে সময়:

ইটিসি বা ইলেক্ট্রনিক্স টোল কালেকশন টোল সংগ্রহের একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। যেখানে কোনো যানবাহন টোল প্লাজা অতিক্রমকালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করা হয়। বাংলাদেশে ১০টি সেতুতে ইটিসি ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুও রয়েছে।

 

নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ইটিসিতে টোল আদায় হলে একদিকে সময় বাঁচবে অন্যদিকে জনবলও কম লাগবে। গাড়ি মালিকদের ইটিসিতে টোল দিতে উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। তারপরও মানুষ ইটিসিতে রেজিস্ট্রেশন করছে না। অথচ যানবাহনগুলো ইটিসি করলে দ্রুত সময় গাড়ি টোল দিয়ে পার হতে পারে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট