নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে গত তিনদিন ধরে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে নগরবাসী।
জানা গেছে, এতদিন নগরীর চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নতুন করে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয় ‘নগর সেবা সংস্থা’ নামে নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আই ইউ এ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ল্যাবগুলোতে এমন তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে, নতুন দায়িত্ব পাওয়া ‘নগর সেবা সংস্থা’ মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ করার কথা উল্লেখ করা হয়।
হাসপাতাল ও ল্যাব সংশ্লিষ্টরা জানান, চিঠি পাওয়ার পর থেকে মেডিকেল বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করতে আসেননি কেউ। বিশেষ করে গত ৩দিন ধরে বহু হাসপাতাল-ল্যাব থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করছে না দায়িত্ব পাওয়া নতুন প্রতিষ্ঠানটি। যার কারণে অনেকগুলো ল্যাবে জমে আছে এসব বর্জ্য। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলেও মত তাদের।
খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীর মেডিকেল পাড়াখ্যাত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আশপাশের অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য গত তিনদিন ধরে পড়ে আছে। নতুন দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটি আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোন বর্জ্যই সংগ্রহ করতে আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষ। যার কারণে বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগেই বর্জ্য অপসারণ করতে হয়েছে তাদের।
চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীর প্রায় দুই শতাধিক বেসরকারি মেডিকেল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ করে চসিক। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার কেজি মেডিকেল বর্জ্য উৎপাদন হয়। এরমধ্যে ৮০০ থেকে ৯০০ কেজি মেডিকেল বর্জ্য এবং বাকি ১১০০ থেকে ১২০০ কেজি সাধারণ বর্জ্য। যথা সময়ে এসব বর্জ্য অপসারণ না হলে নগরবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে পূর্বে কোন সময় না দিয়েই অবৈধভাবে চসিক চুক্তি বাতিল করেছে অভিযোগ করে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার স্বত্বাধিকারী জমির উদ্দিন বলেন, কোন রকমের সময় না দিয়ে নিময় বহির্ভূতভাবে চুক্তি বাতিল করেছে। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমার বকেয়া রয়ে গেছে। এছাড়া, নিময় অনুযায়ী আমার সাথে চুক্তি বাতিল করার তিন মাস আগে আমাকে জানানোর নিয়ম ছিল যা চসিক মানেনি।
গত তিনদিন ধরে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর সেবা সংস্থার মেসার্স সুলতান কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী সালাউদ্দিন শাহেদ বলেন, শনিবার রাত থেকে আমরা মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছি। আমরা যেহেতু নতুন কাজ করছি ভুলবশত কোন প্রতিষ্ঠান বাদ পড়তে পারে। আমরা নিয়ম অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠান নগরীর চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ করে আসছে। কোন ধরনের নীতিমালা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে আসছে। বর্তমানে ২০২৫ সাল চললেও তারা ২০১৫ সাল অনুযায়ী চসিককে ফি দিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগে যারা কাজ নিয়েছে তারা দিত মাসে মাত্র ৪ লাখ টাকা। কিন্তু নতুন যারা কাজ পেয়েছে তারা মাসে ৯ লাখ করে দিবে। সেক্ষেত্রে নতুন প্রতিষ্ঠান থেকে চসিকের বছরে ৬০ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আসবে।
গত তিনদিন ধরে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আজ (গতকাল রবিবার) থেকে নতুন প্রতিষ্ঠান বর্জ্য অপসারণ করবে। সম্প্রতি নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের নিয়ে একটি মিটিং করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব