চট্টগ্রাম রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

রমজানপণ্যের দাম কমার ছাপ নেই ইফতার বাজারে

আরাফাত বিন হাসান

৩ মার্চ, ২০২৫ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান ঘিরে উৎসবের আমেজ বইছে নগরে। বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁর বাইরে সামিয়ানা টানিয়ে ইফতারের বাহারি পদ নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। রঙিন ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে চারপাশ। বিকেল গড়াতেই বিক্রেতাদের নানা হাঁকডাকে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশের। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব হোটেল-রেস্তোরাঁর বাইরে ভিড় বাড়তে থাকে ক্রেতাদের। আবার বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া ঘরমুখো মানুষও উঁকি দেন নানা হোটেল-রেস্তোরাঁয়। পছন্দের ইফতারি নিয়ে বাসায় ফিরেন পরিবারের কাছে। তবে উৎসবের আমেজে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা অনেকেই মুখ ভার করছেন নানা পণ্যের চড়া দাম শুনে।

 

এবার আটা, ময়দা, চিনি, তেলসহ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে নানা পণ্যের। গেল কয়েক বছরের তুলনায় দেশের বাজারেও নিম্নমুখী ছোলা, চিনি, পেঁয়াজসহ রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের দাম। তবে রমজান পণ্যের দাম নিম্নমুখী হলেও তার প্রভাব পড়েনি ইফতারের বাজারে। গেল বছরের মতো ফুটপাত থেকে অভিজাত রেস্তোরাঁ- সর্বত্র বেশ চড়াই রয়ে গেছে ইফতারের বাজার। অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে নানা মুখরোচক খাবার তৈরি হলেও ইফতারসামগ্রী হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছোলা, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ ও জিলাপিসহ তুলনামূলক কম দামি পণ্যগুলো। গতকাল রবিবার প্রথম রমজানের দিন বিকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

 

এদিন বিকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ ও জিলাপি বিক্রি হচ্ছে পণ্যভেদে প্রতিপিস ৫ থেকে ১৫ টাকা দামে। এক বছর আগেও এসব সামগ্রীর দাম একই ছিল প্রায়। তাছাড়া এবার ইফতারির বাজারে প্রতিকেজি রান্না করা ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০, চিকেন স্টিক ১২০, ফ্রাইড প্রন ৬০, স্প্রিং রোল ২৫, শামি কাবাব ৫০, চিকেন শাসলিক ১২০, চিকেন ড্রামস্টিক ৭০, বিফ কাটলেট ১২০, চিকেন ললিপপ ৬০, মোমো ফ্রাই ৪৫, চিকেন ফ্রাই ৬০, চিকেন স্টিক ১২০, চিকেন রোল ৩০, চিকেন ব্রোস্ট ১২০, চিকেন বটি কাবাব ২৬০, চিকেন অংথন প্রতিপিস ৪০-৫০, তান্দুরি চিকেন ১৫০, গ্রিলড চিকেন ১৪০, চিকেন নাগেট ৯০-১০০, চিকেন বল ৩০-৫০, বিফ ও মাটন হালিম ৮০০ টাকা কেজি, চিকেন হালিম ৭৫০-৭৮০, বিফ মেজবানি কেজি ১২শ-১৩শ, গোটা মুরগি রোস্ট ৪৮০ এবং বিফ চপ কেজি এক হাজার ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে লাচ্ছি প্রতি লিটার ৪০০-৬০০, দইবড়া পিস ১০০, ফিরনি কেজি ৩৮০ এবং জিলাপি কেজি ৩০০-৪২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

 

গতকাল বিকেলে নগরীর দামপাড়ার ধাবা রেস্তোরাঁয় হালিম কিনতে এসেছিলেন জিইসি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম। তিনি বলেন, প্রতিবছর এখান থেকে হালিম কিনি। তাই আজ প্রথম ইফতার হিসেবে হালিম কিনতে এসেছি, অনেক দাম। এই রমজানে আর কেনা হবে না।

 

পরিবর্তন নেই রান্না করা মাংসের দামেও। নগরে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০, গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৯৫০-১১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম রমজানে প্রায় শতাধিক আইটেম নিয়ে ইফতার মেন্যু সাজিয়েছে নগরের মুরাদপুরের হোটেল জামান। মেজবানির মাংস ১২০০ টাকা, ব্রিফ হালিম মাটন হালিম ৮০০ টাকা, চিকেন হালিম ৭৬০ টাকায় বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আখনি বিরিয়ানিসহ শতাধিক আইটেম তৈরি করা হয়েছে ইফতারের জন্য। ক্রেতাদের চাহিদা মতো পণ্য বিক্রি ও সুনাম ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য। তাই রমজানের চাঁদ দেখার সাথে গরু জবাই করে ইফতার আইটেম তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া চিকেন দিয়ে তৈরি আইটেমগুলো আছেই। ভেজালমুক্ত ও শতভাগ হালাল পণ্য পরিবেশন করে গ্রাহকদের সন্তুষ্টিই আমাদের লক্ষ্য।

 

বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের নিম্নমুখী দামের মধ্যে ইফতার পণ্যের চড়া দামের বিষয়ে নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকার রাজবাড়ী রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী শরীফ চৌধুরী বলেন, ইফতারের দাম কমেনি এটা সত্য না। ভোগ্যপণ্যের বাজার নিম্নমুখী থাকবে আশা করে আমরা কিছু কিছু ইফতার সামগ্রীর দাম কমিয়েছি। কিন্তু এখন সমস্যায় পড়েছি। তেলের তেলেসমতি চলছে, তেলের দাম আমাদের ভোগাচ্ছে। তাছাড়া মসলার দামও বাড়তি, এটার কারণেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট