চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই লবণের আগ্রাসন হালদা-কর্ণফুলীতে

মোহাম্মদ আলী

৩ মার্চ, ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই লবণের আগ্রাসন দেখা দিয়েছে ওয়াসার পানিতে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণের উপস্থিতি শুরু হয়। এরপর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে নদী দুটির পানিতে লবণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখন মার্চে এসে তা অসহনীয় হয়ে ওঠেছে।

 

সর্বশেষ গতকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ওয়াসার প্রতিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২৩২০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় ওয়াসার পানি উৎপাদনের বৃহৎ চার প্রকল্প মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২ এবং মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পে পানি উৎপাদন দৈনিক কয়েক ঘণ্টা করে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাতে ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে গেছে কমপক্ষে দৈনিক ৫ কোটি লিটার।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ওয়াসার পানিতে অসহনীয়মাত্রায় লবণ মিলছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হ্রাস পাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। কাপ্তাই লেকের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে বন্ধ ৪টি। এ অবস্থায় উজানের স্রোতে কমে যাওয়ায় জোয়ারের সময় বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদায় প্রবেশ করছে। লবণাক্ত পানির কারণে ওয়াসার চারটি প্রকল্পে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পে দৈনিক ৯ কোটি লিটারের পরিবর্তে সাড়ে ৭ কোটি লিটার, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২’ তে ২৮ কোটির পরিবর্তে ২৬ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পে ৯ কোটি লিটারের পরিবর্তে ৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। সহসা বৃষ্টি না হলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সূত্র জানায়, বর্তমানে কাপ্তাই লেকে পানি রয়েছে ৮৯ দশমিক ৩৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল), স্বাভাবিকভাবে পানি থাকার কথা ৯৩ দশমিক ৬০ এমএসএল। বর্তমানে হ্রদে ৪ দশমিক ২১ এমএসএল পানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। দেশের একমাত্র এই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটে দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু লেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি না থাকায় বর্তমানে একটি মাত্র ইউনিট চালু রয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট। এখন বৃষ্টি না হলে কাপ্তাই লেকের পানি আরো হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

 

সূত্র জানায়, ওয়াসার সবগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে দৈনিক প্রায় ৪৭ কোটি লিটার। কিন্তু হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পানি উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক প্রায় ৪২ কোটি লিটার।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হ্রাসের কারণে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ২ মার্চ প্রতিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২৩২০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় ওয়াসার সবগুলো প্রকল্পে পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাতে ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে গেছে দৈনিক ৫ কোটি লিটার। পানি সংকট কাটাতে বিকল্প চিন্তাও করছে ওয়াসা।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট