রোজারপণ্যে স্বস্তি
মহামারির ধকল কাটিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয় ২০২৩ সালে। তখন থেকে কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের বাজার। তবে ২০২৪ সালের রমজানে ফের ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন সব পণ্যের দাম বেড়ে যায় ওই বছর।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট ভাঙতে উঠে-পড়ে লাগে অন্তর্বর্তী সরকার। তার ফল মিলছে চলতি রমজানে। গেলো বছরের তুলনায় পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, চিনি, খেজুরসহ রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন নয় পণ্যের গড়ে দাম কমেছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে সাত পণ্যের দামই কমতির দিকে; অপরিবর্তিত রয়েছে একটির। তবে রমজান-পণ্যের মূল্যে এই স্বস্তি মলিন ভোজ্যতেলে। নগরে ভোজ্যতেল কিনতে দোকানে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বাজারদর নিম্নমুখী হলেও ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি ভোগ্যপণ্যের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তৎপরতায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি জটিলতা হ্রাস ও পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির কথা বলছেন আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও খুব বেশি পরিবর্তন নেই বাজারদরে। গেলো বছরের তুলনায় বেশকিছু রমজান-পণ্যের দাম কমলেও তা পরিমাণে সামান্যই বলা চলে। দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন মুদি বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে এমন চিত্র। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, চিনি, সয়াবিন তেল, ডিম, মুরগি, খেজুর ও খেসারি ডাল। এর মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে দাম কমেছে পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, চিনি, ডিম, মুরগি ও খেজুরের।
সবচেয়ে বেশি ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে পেঁয়াজের দাম। ২০২৪ সালের রমজানে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। দাম কমার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে খেজুর। শুল্কায়ন মূল্য ও বাড়তি শুল্ক নিয়ে গেলো বছর নানা আলোচনার জন্ম দেওয়া ইফতারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষঙ্গের দাম ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে এবার। ২০২৪ সালে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়া সাধারণ মানের খেজুর এখন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে বন্দরনগরে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে চিনির দাম। গেলো বছরের চেয়ে কেজিতে ২৫ টাকা কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এছাড়া প্রতি ডজন ডিমের (ফার্ম) দাম ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, কেজিতে রসুনের দাম নয় শতাংশ, ছোলার দাম চার শতাংশ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম দুই দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে। নগরে প্রতি ডজন ডিম (ফার্ম) ১২০, রসুন ২০০, ছোলা ১২০ এবং ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গতবছরের মতো এবারও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খেসারি ডাল।
রমজানের সাত পণ্যের দাম কমলেও উত্তাপ ভোজ্যতেলের বাজারে। নগরীর অধিকাংশ মুদি দোকানে মিলছে না ভোজ্যতেল। কোথাও কোথাও মিললেও তেলের সঙ্গে অন্য কয়েকটি পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার নগরীর অক্সিজেন এলাকার চৌধুরী কমপ্লেক্সে বিসমিল্লা স্টোরে ভোজ্যতেল চাইলে দোকানদার জানান, এক লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন নেই। তবে কয়েকটি পণ্য কিনলে তিনি দুই লিটার ওজনের সয়াবিন তেল দিতে পারবেন। তবে তাতেও গুনতে হবে ৪০০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি।
এ সময় দোকানে সাজানো এক লিটার ওজনের তেল দেখিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলে ওই তেল বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। তবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন নগরীর দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা। এসব বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে।
রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন ভোগ্যপণ্যের সরবরাহের বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, এবার পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে সব পণ্যের। রমজানে সরবরাহও স্বাভাবিক থাকবে। কোন ধরনের সংকটের সম্ভাবনা নেই। দামও গেলো বছরের চেয়ে কম।
রমজান-পণ্যের নিম্নমুখীতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, সরকারের কিছু নীতির কারণে সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফল হিসেবে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দেশের বাজারে দাম আরও কমার কথা। কিছু পণ্যের দাম কমলেও চাল, তেল, সবজিসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ছাড়া কেউ মাঠে নেই, তারাও কেবল তেল নিয়ে আছে। লেবু, শসা, বেগুন এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে হঠাৎ; সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
পূর্বকোণ/পিআর