চট্টগ্রাম রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সর্বশেষ:

মসলার নামে আমরা কী খাচ্ছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১:৫০ অপরাহ্ণ

বিয়ে, মেজবান, মিলাদ, ওরশ ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হয় শীত মৌসুমকে ঘিরে। তাই শুধু কোরবানি নয়, শীত মৌসুমেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গুঁড়ো মসলার চাহিদা থাকে বেশি। এছাড়া প্রতিদিনের রান্নাবান্নায় মসলার চাহিদা তো আছেই। কিন্তু বাজার থেকে কেনা মসলার নামে আমরা কী খাচ্ছি।  কাপড়ের ক্ষতিকারক রং ও ধান-চালের তুষ মিশিয়ে নগরীতে তৈরি করা হচ্ছে গুঁড়ো মসলা। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। খোদ জেলা প্রশাসন, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, র‌্যাবসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে এরকম ভেজাল মসলা উদ্ধার করা হয়েছে নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর থেকে। গত বছরের ২৩ মে র‌্যাব বাকলিয়ার চাক্তাই এলাকায় ভেজাল গুঁড়ো মসলা তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় জসিমের ক্রাসিং মিলে অভিযানে ক্ষতিকারক রং মেশানো প্রায় ৬শ কেজি হলুদ, মরিচ ও ধনিয়ার গুঁড়ো এবং ১২ কেজি রং ও রাসায়নিক পদার্থ উদ্ধার করা হয়। মিল ঘর মালিক জসিম উদ্দিনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন।

এর মাসখানেক পর জুন মাসে বাকলিয়ার মিয়াখান নগরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মসলা জব্দ করে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর। অভিযানে অননুমোদিত ৩৫০ কেজি লাল রং (৭ বস্তা, প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে), হলুদ রং ২০০ কেজি (৪ বস্তা) এবং ধান-চালের তুষ-কুড়ো ২৫০ কেজি (৫ বস্তা) উদ্ধার করেন নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

গতকালও মিয়াখান নগরে অভিযান চালিয়ে ক্ষতিকারক রঙ, ভূষি, কয়লা-কাঠের গুঁড়ো মেশানো ৯০০ কেজি মসলা জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে কারাখানার মূল মালিক বাচ্চু মিয়াসহ চার শ্রমিককে হাতেনাতে আটক করা হয়। বাচ্চু মিয়াকে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১ বছর বিনাশ্রম কারাদ- এবং জব্দকৃত মালামাল জনসমক্ষে ধ্বংস করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির অভাবে নগরীর বাকলিয়া এলাকায় একাধিক ভেজাল মশলার কারখানা গড়ে তুলেছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তারাই বেশি লাভের আশায় কাপড়ের ক্ষতিকারক রং ও ধান-চালের তুষ মিশিয়ে গুঁড়ো মসলা তৈরি করছেন। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছেন।

তবে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতি বছরই পবিত্র রমজান মাসে অধিক মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল মসলা উৎপাদন ও বাজারজাত করেন। এ বছর যেন এরকম ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরি ও বাজারজাত না হয় সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

ভেজাল মশলা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতার লিপি। তিনি বলেন, কাপড়ের রঙে মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা মানুষের লিভার, কিডনি রোগ সৃষ্টি করে। শরীরে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি করে। এছাড়া কাঠ ও কয়লার গুঁড়ো তো কোনো প্রাণীর খাবার নয়। মানুষ তা খেলে হজম করতে পারবে না। হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে মানুষের পাকস্থলী ও কিডনি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়।

 

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট