চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন রাজধানী ঢাকার কমলাপুর আইসিডি পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত পছন্দের প্রার্থীই কাজ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ওই কাজে আগ্রহী একাধিক প্রতিষ্ঠান। এমনকি এ বিষয়ে অভিযোগ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি টেন্ডারে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণে গঠিত সরকারি বিভাগ সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) পর্যন্ত গড়িয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার কথা জানিয়েছে ওই কাজে আগ্রহী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
সর্বশেষ সিপিটিইউতে ইস্পাহানী সামিট এলায়েন্স টার্মিনালস লিমিটেডের দায়ের করা অভিযোগের শুনানি ছিল গত ২২ নভেম্বর। ওই শুনানিতে দায়ের করা ৭টি অভিযোগের প্রতিটির বিপরীতে বন্দর কর্তৃপকক্ষের লিখিত বক্তব্য ও তার স্বপক্ষে যাবতীয় নথিপত্র পেশ করতে বলা হয়। তবে শুনানির দিন (২২ নভেম্বর) অভিযোগের বিপরীতে বন্দরের পক্ষে উপস্থিত কর্মকর্তা কোন বক্তব্যই পেশ করেন নি বলে জানিয়েছেন শুনানিতে উপস্থিত থাকা ইস্পাহানী সামিট এলায়েন্স টার্মিনালসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। উপরন্তু ইস্পাহানী সামিট এলায়েন্স টার্মিনালসের দায়ের করা অভিযোগ অযোগ্য বলে আবেদন না মঞ্জুর করে দেয় সিপিটিইউ। গত ৩০ নভেম্বর প্রকাশ করা সেই রায়ে বলা হয়, যেহেতু ইস্পাহানী সামিট এলায়েন্স টর্মিনালস লিমিটেড কমলাপুর আইসিডি পরিচালনার টেন্ডারে দরপত্র ক্রয় করেছেন, কিন্তু সেটি জমা দেননি। ফলে টেন্ডারে ইস্পাহানী সামিট এলায়েন্স টার্মিনালসের কোন অভিযোগ তোলার এখতিয়ার নেই।
এ প্রসঙ্গে ইস্পাহানি সামিট এলায়েন্স টার্মিনালের সিনিয়র জিএম এবং হেড অব অপারেশন ক্যাপ্টেন এস মেহেদী হাসান পূর্বকোণকে বলেন, আমরা দরপত্র ক্রয় করেও দরপত্র জমা না দেওয়ার যৌক্তিক কারণ ছিল। যেই টেন্ডার ও টেন্ডারে যুক্ত করা অযৌক্তি শর্ত নিয়েই আমাদের অভিযোগ। সেই টেন্ডারে তো আমাদের দরপত্র জমা দেওয়ার কথা না। টেন্ডারে অযৌক্তিক কিছু শর্তজুড়ে দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সবাইকে অযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের শুরু থেকে আমরা যারা আইসিডি পরিচালনা করে আসছি, তারাই সেই টেন্ডারে অযোগ্য। প্রথমবার টেন্ডারে এই কাজে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে সরকারি কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারি কাজের অভিজ্ঞতা। এমনকি এও বলা হয়েছে যে- সরকারি একটি কাজের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলে কমলাপুর আইসিডি পরিচালনার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। অথচ এই শর্তের কারণে দেশের নতুনভাবে কাজ শুরু করা দুটি আইসিডিসহ মোট ২১টি আইসিডির কেউই কমলাপুল আইসিডি পরিচালনার কাজের টেন্ডারে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগ করা হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু সেখানেও দেওয়া হয় নতুন শর্ত।
নতুন শর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইসিডি পরিচালনায় দেওয়া হয়েছে সমুদ্রগামী জাহাজের কনটেইনার উঠানামা কাজের অভিজ্ঞতা এবং নিজস্ব ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে রেলপথে কনটেইনার পরিবহনের কাজের অভিজ্ঞতা। এই শর্ত যে নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্যই যুক্ত করা- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওই শর্তে এতোদিন যারা আইসিডি পরিচালনা করে আসছে তাদের অযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে।
একই প্রসঙ্গে দেশের বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশন (বিকডা) সংশ্লিষ্টরা জানায়, দেশে বেসরকরি আইসিডি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতো বছর ধরে বন্দরের শতভাগ রপ্তানি ও ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং করে আসছে।
এছাড়া বন্দরের একটি বিশাল অংশের খালি কনটেইনার অফডকগুলোই হ্যান্ডলিং করে। নিজস্ব জায়গায় নিজস্ব ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার করে এতো বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকার পরেও কমলাপুর আইসিডির মতো ছোট একটি আইসিডি পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞরাই অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। আইসিডি পরিচালনার জন্য আইসিডি পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা না চেয়ে সরকারি ঠিকাদারি কাজে অভিজ্ঞতা চাওয়া ও জাহাজ থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং অভিজ্ঞতা চাওয়া রহস্যজনক। তাই বন্দরের উচিত দেশের আমদানি রপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে বন্দরের কাজকে ঝুঁকিতে না ফেল
পূর্বকোণ/পিআর