কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুন্ড’র নামে অর্জিত সম্পদের খোঁজ চেয়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুদক। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলভুক্ত সকল ব্যাংকেও চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। যেখানে গৌতম চন্দ্র কুন্ড এবং তার স্ত্রী-সন্তান ও সংশ্লিষ্টদের নামে লেনদেন, স্থিতি, সঞ্চয়সহ বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে চলতি বছরের গত ১৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য প্রদান এবং নিজ ও স্ত্রী-সন্তানের নথিপত্র দাখিলের জন্য তলব করে দুদক। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে বেনামে ‘শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। তলবের দিন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ হাজির হয়ে চাহিত নথিপত্র জমা দেন কেজিডিসিএল এর জিএম গৌতম চন্দ্র কুন্ড। এর পরপরই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, সঞ্চয়, ভূমি শাখাসহ প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি প্রেরণ করে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পাঠানো চিঠির উত্তর পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই যুগের বেশি সময় সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছেন প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুন্ড। তার বিরুদ্ধে কেজিডিসিএল এর বার্ষিক সাধারণ সভার নামে খরচ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, টাকার বিনিময়ে নিয়মের বাইরে গিয়ে সিইপিজেডেরে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ কিস্তিতে বকেয়া বিল প্রদানের সুবিধা, ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজসে সম্পূর্ণ মালামাল সরবরাহ না করে অর্থ আত্মসাৎ ও নিজেই ঠিকাদারদের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত, বাহির সিগন্যাল এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের নামে ঘুষ গ্রহণ, অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণের নামে সরকারি গাড়ির ক্ষতিসাধন ও তা মেরামতের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ প্রদানসহ বহু অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভিন্নভাবে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন জিএম গৌতম চন্দ্র কুন্ড। এসব অবৈধ অর্থ দিয়ে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি ধোলাই খাল এলাকায় কাঠার জায়গা, বাংলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায় নামে-বেনামে প্রায় ১৪ কাঠা জমি ক্রয়, বরিশাল ও চাঁদপুরে জায়গা ক্রয়, গাড়ি ক্রয় করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুবাদে অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হয় এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
যদিও এসব অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে কেজিডিসিএল এর জিএম প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুন্ড পূর্বকোণকে বলেছিলেন, ‘২৭ বছর ধরে চাকরি করছি। বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে চাকরি করছি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কত প্রকার, তা আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করে আসছি। আমি এমন কোন কাজ করি না, যেটি আমার পরিবার কিংবা আমার সন্তানদের উপর প্রভাব পড়ে। আমার জন্য হয়তো কারও সমস্যা হচ্ছে, তারা আমার কারণে হয়তো নয়-ছয় করতে পারছেন না, সে জন্য আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন।’
পূর্বকোণ/আরডি