আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রেনে চড়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারযাত্রা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
রেল বলেছিল, কক্সবাজারে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে কালুরঘাট সেতু বড় ধরনের সংস্কার করা হবে। গত মাস (জুন) থেকে সেতু সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সংস্কার কাজের সময় সেতুর উপর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চালু করা হবে ফেরি সার্ভিস। ফেরি সার্ভিস চালু করতে না পারায় এখনো সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বরে দাবি রেলের।
এদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সেতু সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে ফেরি সার্ভিস চালুর করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত মে মাস থেকে সেতু সংস্কার কাজের জন্য ফেরি সার্ভিস চালুর কথা উঠেছে।
দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে ফেরি সার্ভিস চালু করা যায়নি বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। সওজ জানায়, ফেরি চলাচলের জন্য চার মাস আগে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই ৫মবার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়। ১৫ দিনের মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালু করার আশা প্রকাশ করছেন সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা। তবে ফেরির টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট সেতু এলাকায় চলাচলের জন্য তিনটি ফেরি ও পল্টুন স্থাপন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু ফেরির টোল নির্ধারণ ও ঠিকাদার প্রক্রিয়া জটিলতার ফাঁদে পড়ে সওজ। অভিযোগ রয়েছে, একটি সিন্ডিকেটের প্রতি বিশেষ আনুকূল্যের কারণে ফেরির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ হয়।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, ‘পাঁচ দফায় ফেরির টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তিন দফায় কোন ঠিকাদার অংশ নেয়নি। চতুর্থ দফায় দুটি টেন্ডার জমা পড়েছিল। আগামী সপ্তাহে ওই ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। আশা করছি, ১৫ দিনের মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালু করা যাবে।’
তিন বছরের জন্য ফেরি সার্ভিস চালুর করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য নয়, সাবেক সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিনের অনুরোধে কালুরঘাটে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সওজ।
গত ৫ মে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন ও ফেরি সার্ভিস চালু বিষয়ক মতবিনিময় সভা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। রেল সচিব বলেছিলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেল সেতু সংস্কার করে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে ট্রেন যাবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। জুন থেকে সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।’
গত ১৬ মে কক্সবাজারের ঝিলংজায় প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি ঢাকার রেলপথ যুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।’
২০ জুনের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলের অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. হামিদুর রহমান। ৬ জুন সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ চিঠি দিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার রেল চলাচল শুরু করা হবে। এজন্য কালুরঘাট সেতুর উপর দিয়ে হায়ার এক্সেল লোডবাহী ইঞ্জিনসহ ট্রেন চলাচল উপযোগী করার লক্ষ্যে সেতু মেরামত কাজ করা প্রয়োজন। ২০ জুনের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। সংস্কার কাজ শুরু করার সময় সেতুর উপর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তাই যানবাহন চলাচলে বিকল্প হিসেবে ফেরি সার্ভিস চালুর করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু সংস্কারে ইতিমধ্যেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। তারা সেতু পরিদর্শন করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে। ফেরি চালু হলেই কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে।’
রেল সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য গত ১৮ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে রেলওয়ে। আট মাসের জন্য সংস্কার কাজ শেষ করার লক্ষ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে রেল। তবে কাজ শুরু করার তিন মাসের মধ্যে দ্রুতগতির রেল চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
পূর্বকোণ/মাহমুদ