নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব কোনায় গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনকে ৫৫০ ফুট জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মাসিক ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫০০ টাকা। গত ৪ জুন ফারুক হোসেনের সাথে সিটি কর্পোরেশনের স্টেট বিভাগ চুক্তি সম্পাদনও করে।

এর মধ্যে গণশৌচাগার নির্মাণকাজ করতে স্থানটি দিয়ে ঘেরাও দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কাজীর দেউড়ি মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণ না করতে সিটি কর্পোরেশনেক চিঠি দিয়েছে নগর পুলিশ। চিঠি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে সিটি কর্পোরেশন। ২০২৩ সালে আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কারণ মাঠটির মালিক ‘চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা’।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, আসলে গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণটি ঠিক হয়নি। এছাড়া সিএমপি থেকেও আপত্তি এসেছে। এ স্থানটি মূলত ভিআইপি এলাকা। এখানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ও রেডিসন ব্লুর মতো হোটেল রয়েছে। আমরা বিষয়টি মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। প্রয়োজন হলে এ স্থানের পরিবর্তে অন্যস্থানে গণশৌচাগার স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হবে।

সিএমপির চিঠিতে যা বলা হয়েছে: চসিকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসফিকুজ্জামান আকতারের পাঠনো চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাজীর দেউড়ি গোলচত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি গণশৌচাগার নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ হিসেবে আমরা মনে করি, প্রস্তাবিত স্থানটি জনস্বার্থ এবং এলাকার সার্বিক পরিবেশের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। প্রস্তাবিত স্থানটির একপাশে ট্রাফিক পুলিশের বক্স ও অপরপাশে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সার্ভিস ডেস্ক রয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানে গণশৌচাগার হলে দুটি স্থাপনার কার্যক্রমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, স্থানটির খুব কাছে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস অবস্থিত। সার্কিট হাউসে ভিআইপি, ভিভিআইপি আসাযাওয়ার অন্যতম স্কয়ার হিসেবে কাজীর দেউড়ি মোড় গণ্য হয়ে থাকে। এছাড়া মোড়টি নগরীর অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় এবং জনসমাগমপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ লোকজন পরিবার ও বন্ধুবান্ধবসহ এখানে আসেন। তারা সামাজিক বিনোদন, আলাপ আলোচনা এবং স্থানীয় সড়কের পাশে খাদ্য উপভোগ করেন। এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নান্দনিক স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণ করা হলে সিএমপির নিরাপত্তা স্থাপনার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি, এলাকার সার্বিক গণস্বাস্থ্যের উপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব, এলাকার সার্বিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের অবনতি, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ও সামাজিক বিনোদনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি এবং জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

চুক্তিপত্রে যা আছে: চলতি বছরের ৪ জুন ফারুক হোসেনের সাথে গণশৌচাগার স্থাপনের জমি বরাদ্দের চুক্তি করে সিটি কর্পোরেশন। চুক্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ চুক্তির মেয়াদ থাকবে। গণশৌচাগারটির মাসিক ভাড়া ১৫০০ টাকা। আগামী ছয় মাসের মধ্যে লিজদাতাকে নিজস্ব অর্থায়নে গভীর নলক‚প স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। মেয়াদ শেষ হলে সচল অবস্থায় গভীর নলক‚প, মোটর ও অন্যান্য সরঞ্জামসহ চসিক বরাবর গণশৌচাগার হস্তান্তর করতে হবে। এ ধরনের দশটি শর্ত রয়েছে চুক্তিপত্রে।

সার্ভেয়ারের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে: আউটার স্টেডিয়ামের পাশে জমিটি সম্পর্কে গত ৫ মে একটি প্রতিবেদন দেন সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট শাখার সার্ভেয়ার জাকারিয়া আল মামুন চৌধুরী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২নং এনায়েতবাজার ওয়ার্ডের কাজীর দেউড়ি মোড় এলাকায় আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব কোনায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্মিত আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীরের বাইরে উত্তর পাশে সিটি কর্পোরেশন নির্মিত ফুটপাতের বাইরে দক্ষিণ পাশে ৫৫০ ফুট খালি জায়গা রয়েছে। যা সড়কের পাশে খালি অবস্থায় রয়েছে। জায়গাটির পূর্বপাশে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও পশ্চিম পাশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কাজের একটি উদ্বোধন ফলক রয়েছে। পাশে আরেকটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। আবেদনকারী ফারুক হোসেন জায়গাটি বরাদ্দ পেলে তাতে নিজ খরচে গণশৌচাগার নির্মাণ করতে চান।

পূর্বকোণ/ইবনুর