চট্টগ্রাম শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

রমজানের সাথে শাওয়ালের ৬ রোজায় সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব

নাসির উদ্দিন

১০ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:৩২ অপরাহ্ণ

আল্লাহপাক বছরকে ১২মাসে ভাগ করেছেন গণনার সুবিধার জন্য। আরবির চলমান মাস ‘শাওয়াল’। এর অর্থ হল উঁচু করা বা উন্নতকরণ। শাওয়াল মাসের ইবাদত ৬টি রোজা রাখা। এই মাসের আমলের দ্বারা পূর্ণ লাভ হয়। নেকির পাল্লা ভারী হয়। সাথে আসে সাফল্য। একমাস ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশের মাস এটি। রমজানে গুনাহ বর্জনের যে অভ্যাস তৈরী হয়,তা বজায় থাকে এই মাসে। তাই রমজানের সাথে সম্পৃক্ত করে ৬টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব দিবেন আল্লাহপাক।

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)বলেছেন,আল্লাহপাক শাওয়াল মাসের ছয়দিনে আসমান এবং জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যাক্তি এই মাসে রোজা রাখবে আল্লাহপাক তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দিবেন। সমপরিমাণ ঘুণাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।
নবীজি ফরমান:যে ব্যাক্তি রমজানের রোজা সঠিকভাবে রাখল এবং শাওয়ালে আরো ৬টি নফল রোজা রাখল আল্লাহপাক ওই ব্যাক্তিকে সারাবছর নফল রোজা রাখার সওয়াব দান করবেন। হাদিসের ব্যাখ্যা কোরআনের আয়াত দিয়ে-আল্লাহ বলেন,যে এক নেকির কাজ
করবে তাকে আমি দশ গুণ দান করব। এক মাসে দশ মাস। ৬ রোজায় ৬০ দিন অথ্যাৎ দুই মাস। রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ৬টি রোজা যুক্ত হলে ৩৬টি রোজা হয়। ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলো ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে), অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে।

শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা নারী-পুরুষ সবার জন্য সুন্নত। শুধু নারীরা এই রোজা রাখবেন, তাদের ধারণা ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এই ছয় রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের রাখার নির্দেশ দিতেন। মহানবীর সুন্নত অনুসরণে এ রোজা রাখা উত্তম। তবে না রাখলেও কোনো অসুবিধে নেই। গুনাহ হবে না।

এ হাদিসটি মূলত পবিত্র কুরআনুল কারিমের সুরা আনআমের ১৬০নং আয়াতের সমর্থন বহন করে। আল্লাহপাক বলেন-‘যে কেউ কোনো নেক আমল করবে তাকে তার দশ গুণ
সওয়াব প্রদান করা হবে।’ এ আয়াতের আলোকে রমজান মাসের রোজার ১০ গুণ সাওয়াব দেয়া হলে তা হবে ৩০০ দিন আর শাওয়ালের ৬ রোজার সাওয়াব ১০ গুণ হলে তা হবে
৬০ দিন। মোট ৩৬০ দিনে আরবি বছর পূর্ণ হয়ে যায়। আর সে হিসেবেই সারা বছর সাওয়াব লাভ করে মুমিন। যার পরিপূর্ণতা আসে এ শাওয়াল মাসে।

কিন্তু কোন কারণে যাদের রমজানের ফরজ রোজা ছুটে গেছে আগে ওই রোজাগুলো রাখতে হবে। ছয় রোজার আগে কাযা রোজা শেষ করতে হবে। তারপর ছয় নফল রোজা একত্রে কিংবা বিরতি দিয়ে রাখা যাবে।

রমজান ছাড়াও মুসলিমদের জন্য বছরে ৫১টি রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আরবি প্রতিমাসের চাঁদের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে তিনটি করে ১১ মাসে ৩৩টি।
জিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি,শাওয়াল মাসে ৬টি, মহররম মাসে ২টি এবং শবেবরাতে ১টি রোজা রাখা মোস্তাহাব।

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:)সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার দুইদিন রোজা রাখতেন। এই দুই দিন ফেরশেতারা আমাদের আমল নামা আল্লাহর দরবারে পেশ করেন। তাই নবীজি রোজা থাকা অবস্থায় যাতে আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ হয় সেই চেষ্টা করতেন। এছাড়া তিনি রবিউল আউয়াল মাসের যে কোন সোমবারে তাঁর জন্মের কারণে শোকরিয়া আদায়ের জন্য রোজা রাখতেন।

রমজান মাসের কাজা রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেন,‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, সে (রমজানের পরে)অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে।’ (বাকারা:১৮৪)। তাই যাঁরা সফরের ক্লান্তি বা অসুস্থতার কারণে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখতে পারেননি,তাঁরা
সেগুলো রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন। কাজা রোজা রেখে ভেঙে ফেললে পুনরায় একটার পরিবর্তে একটা কাজা আদায় করতে হয়, কাফফারার প্রয়োজন হয় না।

এই মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল। শাওয়াল মাসের এই ছয়টি রোজা মূলত সুন্নত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়;কারণ এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, নফল তথা অতিরিক্ত।

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নত,যেরূপ শুক্রবারে,জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আক্দ-নিকাহ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ,মা আয়িশা (রা.)-এর বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। ছয় রোজা শাওয়াল মাসের নির্ধারিত সুন্নত।

কিন্তু কোন কারণে যাদের রমজানের ফরজ রোজা ছুটে গেছে আগে ওই রোজাগুলো রাখতে হবে। ছয় রোজার আগে কাযা রোজা শেষ করতে হবে। তারপর ছয় নফল রোজা একত্রে কিংবা বিরতি দিয়ে রাখা যাবে।

আল্লাহ পাক শাওয়াল মাসের ছয়দিনে আসমান,জমিন সৃষ্টি করেছেন। আসমান, জমিন সৃষ্টি বিষয়টি কুরআনে একাধিকবার তিনি বলেছেন। সূরা আল আরাফ-৫৪,সূরা
ইউনুস-৩,সূরা হুদ-৭,সূরা আল ফুরকান-৫৯,সাজদাহ-৪,ক্বাফ-৩৮ এবং হাদিদ-৪ এই সাতটি স্থানে ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য,চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ,বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক
(আরাফ-৫৪)।

তিনিই আসমান ও জমিন ছয় দিনে তৈরি করেছেন,তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যে,তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে,‘নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত উঠানো
হবে, তখন কাফেররা অবশ্য বলে,এটা তো স্পষ্ট জাদু’ (সূরা হুদ-৭)!
‘তিনি নভোমণ্ডল,ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন,অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত,তাকে জিজ্ঞেস করো’ (সূরা ফুরকান-৫৯)।

নবীজি ‍উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,“রোজা রাখ,সুস্থ থাক”। আল্লাহ আমাদের নবীজির কথামতো রোজা রাখা এবং সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট