চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

মিরসরাইয়ে খাল খননে কাটা পড়ল কৃষিজমি বসতভিটাসহ শত শত গাছ
মিরসরাইয়ে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করতে গিয়ে বসত বাড়ি হারাচ্ছে স্থানীয়রা

মিরসরাইয়ে খাল খননে কাটা পড়ল কৃষিজমি বসতভিটাসহ শত শত গাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মিরসরাই

২১ মে, ২০২৫ | ১২:২৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ১৫ কিলোমিটার খাল সংস্কার করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। কিন্তু খাল খনন করতে গিয়ে দেখা দিয়েছে নানা বিপত্তি। বসত ভিটা, কৃষি জমি ও গাছপালা কেটে নেয়ার অভিযোগে গত ৪ মে ৮৬ জনের স্বাক্ষরসহ ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ খালের সীমানা নির্ধারণ, কোন প্রকার নোটিশ ও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই খাল খনন করতে গিয়ে নিরীহ মানুষের জমি কেটে নেয়া হচ্ছে।

 

মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের আনোয়ারা বেগম মাত্র এক বছর আগে ছড়ার পাশে ৪ কড়া জমি কিনে বাড়ি করেন। এই জায়গা কিনতে অন্যের বাড়িতে ২৫ বছর ধরে কাজ করেছেন। সেই বাড়িতে ৫ মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি। কিন্তু খৈয়াছড়াটি সংস্কার করতে দিয়ে প্রায় ২ কড়া জমি কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তিনি ৫ মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

 

খৈয়াছড়া এলাকার পূর্ব খৈয়াছরা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা আক্তার বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে আমি, মঞ্জুরা বেগম ও আবুল কাশেম মিলে ১০ কড়া জমি কিনে রেল লাইনে পাশে পূর্ব খৈয়াছরা এলাকায় বসবাস শুরু করি। সম্প্রতি খাল খনন করতে গিয়ে আমাদের অর্ধেক জমি কেটে ফেলেছে। এখন ভারী বৃষ্টি হলে আমাদের বাড়িও খালের চলে যাবে। কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক দরিদ্র পরিবার অল্প টাকায় ছড়ার পাড়ে জমি কিনে বাড়ি করে এখন বিপাকে পড়েছেন। কোন নোটিশ কিংবা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাদের বসত ভিটা, আশপাশের কৃষি জমি কেটে খাল খনন করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। খাল খনন করতে গিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে খাল ও ছড়ার পাড়ে থাকা শত শত গাছ।

 

সরকারি নকশা অনুসারে সীমানা নির্ধারণ করে খাল খনন করতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে ইউএনও মাহফুজা জেরিন বরাবরে জসীম উদ্দিন নামে একব্যক্তি লিখিত আবেদন করেছেন।

 

জসীম উদ্দিন জানান, স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এএসসিপি) নামে বিএডিসি’র তত্ত্বাবধানে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ছড়াটি খনন কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজ। সরকারি নকশা অনুযায়ী ছড়ার জায়গা ২০ ফুট চওড়া। খনন কাজের কার্যাদেশ রয়েছে ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে খনন করার। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্কেভেটর চালক ছড়াটি প্রায় ৭০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করতে গিয়ে মানুষের কৃষি জমি, ছড়ার পাড়ে থাকা দরিদ্র মানুষের বসত ভিটা, গাছ পালা কেটে ফেলছে। প্রতিবাদ করতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন ও বিএডিসির কর্মকর্তার সরকারি কাজের দোহাই দিয়ে খনন কাজ চালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

 

বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী তমাল দাশ জানান, খাল খননের সময় বিভিন্ন স্থানের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সমস্যাগুলোর বিষয়ে জানতে পারলে ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধান করে আবার খাল খনন শুরু করা হয়। মিরসরাইয়ে প্রয়োজন বিবোচনায় শুরু হওয়া খাল খনন শেষ হলে উপজেলার অন্তত দুই লাখ মানুষ সরাসরি সুফল ভোগ করবে।

 

মিরসরাইয়ের ইউএনও মাহফুজা জেরিন জানান, খাল খনন নিয়ে খৈয়াছড়া ইউনিয়ন থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। খাল খনন নিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে খনন কাজ করতে বিএডিসি’র কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট