চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

সর্বশেষ:

বিতর্কিত গর্জনিয়া পশুর হাট বন্ধ, বেকায়দায় খামারি-ব্যবসায়ীরা
জনশূন্য গর্জনিয়া পশুর হাট

বিতর্কিত গর্জনিয়া পশুর হাট বন্ধ, বেকায়দায় খামারি-ব্যবসায়ীরা

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১৯ মে, ২০২৫ | ১১:৪৫ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার আলোচিত গর্জনিয়া পশুর হাট আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পেছনে দুরভিসন্ধি রয়েছে এবং এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। একইসাথে, পশুর হাট বন্ধ থাকায় এই অঞ্চলের প্রান্তিক খামারি ও ব্যবসায়ীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, যা কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময়ের গরু, মহিষ ও ছাগলে পরিপূর্ণ পশুর হাটটি এখন জনশূন্য। কয়েক দিন আগেও যেখানে শত শত গরুর হাঁকডাক, বেচাকেনা আর মানুষের ভিড়ে মুখরিত ছিল। আজ সেখানে বিরাজ করছে নীরবতা। ফাঁকা মাঠ আর বাঁশের ঘের—নেই একটি পশুও।

জানা যায়, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া বাজার রামু তথা কক্সবাজারের অন্যতম শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এবং মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় এর গুরুত্ব বহুগুণ। কচ্ছপিয়া ছাড়াও গর্জনিয়া, ঈদগড়, কাউয়ারকোপ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রান্তিক কৃষক ও পশু খামারি-ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহে এই বাজারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে গর্জনিয়া পশুর হাট বন্ধের সিদ্ধান্তকে পক্ষপাতমূলক হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে গর্জনিয়া বাজারের ইজারা মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ২৬ কোটিতে দাঁড়ালে আইনি জটিলতায় তা স্থগিত হয়। বর্তমানে প্রশাসন খাস কালেকশনের মাধ্যমে হাসিল আদায় করছে, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের দাবি, ইজারা বাতিল করায় সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে এবং খাস কালেকশনে অনিয়ম রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে গরু পালন করে আসা তিতার পাড়ার বেলাল উদ্দিন ও ফাক্রিকাটার জসিম উদ্দিন জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লাভের আশায় তারা ঋণ নিয়ে গরু পালন করছেন। তাদের খামারে বিক্রির উপযোগী দুই হাজারের বেশি পশু রয়েছে এবং হাট বন্ধ থাকায় তারা ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও আবদুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বংশ পরম্পরায় তারা গর্জনিয়া বাজারে পশু ব্যবসা করে আসছেন এবং এই হাটই তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র উৎস। হাট বন্ধ করে দেওয়ায় পরিবার নিয়ে অনাহারে মরার উপক্রম হয়েছে তাদের।

গর্জনিয়া বাজার কমিটির সভাপতি এরশাদ উল্লাহ জানান, সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু প্রবেশ করছে। তবে, হাটে স্থানীয়ভাবে পালিত দেশি গরুর বিক্রিও উল্লেখযোগ্য। হাট বন্ধ হলে দেশি গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাবে।

সচেতন মহলের অভিযোগ, সীমান্ত দিয়ে আসা অবৈধ গরু আটকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই, অথচ সরকারিভাবে ইজারাকৃত বাজার থেকে কেনা বৈধ গরু আটক করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক খামারি ও ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়েছেন। তারা আরও জানান, উপজেলা প্রশাসন এক ধরনের দোটানায় পড়েছে—প্রশাসন রশিদ দিয়ে গরু বিক্রি করলেও বিজিবি মাঝপথে সেগুলো আটক করছে এবং ক্রেতাদের বৈধ রশিদও আমলে নিচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, আদালতে একটি মামলায় সাময়িকভাবে গর্জনিয়া বাজারের পশুর হাটের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

পূর্বকোণ/এরফান/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট