চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

২৩ বছরে পেকুয়া উপজেলা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের

এএম এমরান আহমেদ, পেকুয়া

২৭ এপ্রিল, ২০২৫ | ২:৩৪ অপরাহ্ণ

পর্যটননগরী কক্সবাজারের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় নান্দনিক উপজেলা পেকুয়া। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল মোহনা ও খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীর কুল ও ভোলাখালের তীরে গড়ে ওঠা পেকুয়া উপজেলা। ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল পেকুয়ার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রচেষ্টায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চকরিয়া থেকে ভাগ করে পেকুয়াকে আনুষ্ঠানিক উপজেলা ঘোষণা করেন।

আজ হাঁটি হাঁটি পা পা করে উপজেলাটির ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বিএনপিসহ পেকুয়ার সর্বস্তরের মানুষ। এই উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নতুনরূপে সাজানো হয়েছে পেকুয়াকে। বিএনপি এবং চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ সালাহ উদ্দিন আহমদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে বিগত ২০০২ সালে ২৭ এপ্রিল বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা থেকে ৫টি ইউনিয়নকে আলাদা করে প্রতিষ্ঠিত হয় পেকুয়া উপজেলা।

সালাহ উদ্দিন আহমদ পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের সিকদারপাড়া গ্রামের শিক্ষাবিদ মরহুম মৌলভী সাইদুল হক ও মরহুম আয়েশা হকের সন্তান।

২০০২ সালে ২৭ এপ্রিল বৈশাখের তাপদাহে লাখো মানুষের উপস্থিতি ও মেজবানের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি তথা চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ মাঠে বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণে পেকুয়াকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেন।

পরে বারবাকিয়া ইউনিয়নকে পৃথক করে শীলখালী ইউনিয়ন নামে আরেকটি নতুন ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে। একইভাবে মগনামা ইউনিয়নকে পৃথক করে উজানটিয়া নামে আরেকটি ইউনিয়ন গঠন করা হয়। অথাৎ ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়। সেই জনসভায় চট্টগ্রামের মন্ত্রী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ডজনখানের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি উচ্চ মহলের বিভিন্নস্থরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, পেকুয়া একটি ছোট ইউনিয়ন। এ ইউনিয়কে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়েছে। পাহাড়বেষ্টিত ও কাঁদায় পরিপূর্ণ এলাকাকে আজ থেকে ২২ বছর আগে উপজেলায় রূপান্তর সাঁজিয়েছে বহুরূপে। সুন্দর মনোরম পরিবেশে বেচে নিয়ে উপজেলা পরিষদের জন্য ৪তলাবিশিষ্ট বেশ কয়েকটি বড় ভবন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার জন্য ২টি ৪তলা ভবন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়। এমনকি উপজেলা পরিষদে আসা লোকজনের ইবাদতের কথা চিন্তা করেও সালাহউদ্দিন আহমেদ উপজেলা পরিষদের ভেতরে বিশাল আকারের জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজ ২২ বছর পূর্ণ হলেও উপজেলা পরিষদের এখনো নেই পূর্ণরূপে অনেক দপ্তরে কর্মকর্তা। শুধু চলছে- জুড়াতালি দিয়ে। মামলা মোকাদ্দমা নিষ্পত্তির জন্য এখনো আদালত হয়নি। পেকুয়ার সব মানুষকে চকরিয়া গিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার কাজ করতে হচ্ছে।

পেকুয়ায় উপজেলা হওয়ায় আদালত ছাড়া প্রায় সবকিছু চকরিয়া থেকে পৃথক হয়ে গেছে। কিন্তু পেকুয়াবাসীর একটি দুঃখ থেকে আছে প্রতিষ্ঠার ২২ বছরেও পেকুয়ায় কোন সরকারি সোনালী ব্যাংকের শাখা আদৌ স্থাপন করা হয় নি। যার ফলে সরকারি কার্য পরিচালনা করতে লেনদেন করতে হলে চকরিয়া উপজেলায় গিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠার কারণে পেকুয়ার মগনামায় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে।

আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে ২১°৪৩´ থেকে ২১°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৩´ থেকে ৯২°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশজুড়ে অবস্থিত পেকুয়া উপজেলার আয়তন ১৩৯.৬৮ বর্গ কিলোমিটার। পেকুয়া উপজেলার পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা, দক্ষিণে মহেশখালী উপজেলা, পূর্বে চকরিয়া উপজেলা এবং উত্তরে চট্টগ্রামের বাশঁখালী উপজেলা অবস্থিত। পেকুয়া উপজেলার মানুষ সাধারণত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। এই উপজেলায় নৃতাত্বিক রাখাইন জনগোষ্ঠী বসবাস করে। যাদের ভাষার প্রভাব স্থানীয় ভাষায় লক্ষ্য করা যায়। পেকুয়া উপজেলাটি ভোলাখালের মাধ্যমে দ্বি-খণ্ডিত হয়েছে। নদীর দুই তীর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বেড়িবাধ নির্মাণ করা আছে।মাতামুহুরী এবং পেকুয়া উপজেলার পাহাড়ি ছোট ছোট নদী থেকে ভোলাখালের উৎপত্তি। এটি শিলখালী, বারবাকিয়া, পেকুয়া, মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী হয়ে মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। একসময় এ নদীই ছিল পেকুয়া উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানেও সীমিত আকারে এ নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল পার করা হয়। তাছাড়া এই নদীর উপর শীতকালীন সবজি ও ধান চাষের সুবির্ধার্থে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ একটি রাবার ড্যাম করে দেন। এই  নদীর পানি দিয়ে কৃষিকাজ করা হয়। অধিকন্তু এই নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। কয়েকটি ইউনিয়ন সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল হতেই দুর্যোগী এবং উত্তাল সাগরের সাথে সংগ্রাম করে টিকে রয়েছে। প্রাচীণকাল থেকেই পেকুয়া উপজেলার  জনগোষ্ঠী খেলাধুলা ও বিনোদন এর ব্যপারে আগ্রহী। এখানকার জনপ্রিয় খেলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবলের আধিপত্য দেখা গেলেও অন্যান্য খেলার মধ্যে বলী খেলা (কুস্তি) পিছিয়ে নেই।  প্রতিবছর বৈশাখ মাসে বিভিন্ন ইউনিয়নে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয় । পেকুয়া উপজেলায় বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে পেকুয়া উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ মাঠ অন্যতম। এছাড়া অনেক বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণীর জন্মও এ পেকুয়া উপজেলায় । শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পেকুয়ার মানুষ। পেকুয়ার মানুষের জন্য সালাহউদ্দিনের অবদান ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এদিকে, পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠার ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, পেকুয়া প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ পাক্ষিক পেকুয়ার সম্পাদক মোহাম্মদ ছফওয়ানুল করিমের নেতৃত্বে আলোকসজ্জা, আতশবাজি ও মিষ্টিমুখের মাধ্যমে দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। এছাড়া পেকুয়া প্রেস ক্লাব ও পাক্ষিক পেকুয়া উদ্যোগে র‍্যালি, উপজেলা পরিষদের হল রুমে সুধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, সালাহউদ্দিন পেকুয়াকে উপজেলা করার পর পেকুয়া আজ অনেক পরিবর্তন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে সালাহউদ্দিন পেকুয়াকে বাংলাদেশের মডেল একটা উপজেলা করতেন। উন্নয়নের দিকে কোন কিছু পিছিয়ে থাকত না। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পেকুয়া পরিপূর্ণ একটি উপজেলায় রূপান্তরিত হবে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ সকালে বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিষ্টিমুখ, মোনাজাত ও ১০ হাজার পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট