চট্টগ্রাম বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

নদভীর সামনে হ্যাট্রিকের হাতছানি চ্যালেঞ্জ নিতে চান মোতালেব

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

লোহাগাড়ার সবচেয়ে বড় বাজার আমিরাবাদে চালের ব্যবসা করেন তৌহিদ হোসেন। দীর্ঘদিন প্রবাসজীবন কাটিয়ে আসা এ ব্যবসায়ীর কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘ভোট দিতে যাবেন?’

 

কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই তিনি জবাব দিলেন, ‘ভোটের আগেই প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। ভোটের দিন কি তারা শান্ত থাকবেন? জীবনসায়াহ্নে এসে জীবনবাজি রেখে ভোট দিতে চাই না।’

 

তৌহিদের পাশেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন আলী আহমদ। ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ আমিরাবাদ বাজার এখন নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব দেখে যে কেউ মনে করবেন এখানে ভোট উৎসব চলছে। তবে বাইরে যাই থাকুক, এখানকার মানুষ কিন্তু ভোটের দিন নিয়ে শঙ্কায় আছে।’

 

সংঘাতের শঙ্কা প্রকাশ পেলো সাতকানিয়ার ‘প্রাণকেন্দ্র’ কেরাণীহাট বাজারের ব্যবসায়ী খালেদ মামুনের মুখেও। ঠাকুরদীঘি বাজারের এ বাসিন্দা জানান, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় এই প্রথম আওয়ামী লীগের দুই নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই দলীর নেতাকর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত। ভোটের মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। তুচ্ছ ঘটনায় একপক্ষের সঙ্গে অন্যপক্ষের সংঘাত হচ্ছে। যা ভোটারদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

কেরাণীহাট থেকে সাতকানিয়া সদরের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। গত সোমবার সদর এলাকা ঘুরে দেখার সময় সঙ্গী ছিলেন অটোরিকশা চালক আমির উদ্দিন। তৌহিদ, আলী বা খালেদের মতো সংঘাত নিয়ে শঙ্কা দেখা গেলো না তার মধ্যে। আমিরের ভাষ্য, ‘নির্বাচন মানেই এখানে উৎসব। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মিটিং-মিছিলে সরগরম হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না।

 

লোহাগাড়া-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলা নিয়েই সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-১৫। এখানে এবার নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মো. নেজামউদ্দিন নদভী। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কায় লড়ছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এ দু’জনের সমর্থকরা প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংঘাতে জড়াচ্ছেন।

 

স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনগুলোতে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরাই সবচেয়ে বেশি জয়ী হয়েছেন। এবার এ দুই দল নির্বাচন বর্জন করায় তাদের কোন প্রার্থী নেই। তাই জামায়াত-বিএনপির ‘ভোট ব্যাংক’ কোন দিকে যায় সেদিকে সবার আগ্রহ রয়েছে। দুই প্রধান প্রার্থী নদভী ও মোতালেবও চাইছেন তাদের পক্ষে এ ভোট ব্যাংক টানতে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি কেউ।

 

বিএনপি-জামায়াতের ভোটের চেয়ে লোহাগাড়া উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ভোটকেই ফ্যাক্টর মনে করেন অনেকে। কারণ মোতালেব সাতকানিয়া কেন্দ্রিক রাজনীতি করায় লোহাগাড়া উপজেলায় তার যোগাযোগ স্বাভাবিভাবেই কম। বিপরীতে টানা দুইবার সংসদ সদস্য থাকায় সাতকানিয়া-লোহাগাড়া দুই উপজেলাতেই নদভীর নিজস্ব বলয় তৈরি হয়েছে। যা ভোটের মাঠে তাকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।

 

তবে এবার নির্বাচনে কোন চ্যালেঞ্জ দেখছেন না আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। তিনি বলেন, জনগণ আমার সাথে আছে। আমাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে। নির্বাচিত হলে চলমান উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এখানে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল করবো। অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি ইকো-পার্কও নির্মাণ করবো।

 

অন্যদিকে, এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এম এ মোতালেব। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে সুন্দর-সমৃদ্ধ এবং উন্নত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া গড়তে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, শিশুপার্কসহ বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা হাতে রেখেছি। আমি আশা করি সকল শ্রেণির মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে সে সুযোগ দেবেন।

 

নদভী-মোতালেব ছাড়াও চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে এবার জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ছালেম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোহাম্মদ আলী হোসাইন, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের জসিম উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ হারুন ও কল্যাণ পার্টির সোলাইমান কাসেমী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তাদের প্রচার-প্রচারণা তেমন দেখা যায়নি।

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট