সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শীতলপুর গ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এলাকার প্রতিটি পরিবারের এক বা একাধিক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে কেউ কেউ বাসায় চিকিৎসা নিলেও অধিকাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই চিকিৎসার জন্য সীতাকুণ্ডের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রাফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের এলাকার প্রতিটি ঘরে প্রতিদিনই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হচ্ছে। এদিকে একই এলাকায় শতাধিক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা উপজেলা প্রশাসন। এলাকাজুড়ে বৃদ্ধি পাওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে মশক নিধনে স্থানীয় বাসিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের দ্বারস্থ হলেও তারা কোন ধরনের সহায়তা না করে উল্টো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন জমা দিতে বলেন।
বিআইটিআইডি হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে (শনিবার দুপুর পর্যন্ত) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। যাদের মধ্যে ১৫ জনেরও অধিক রোগী সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার। এছাড়া হাসপাতালটিতে শনিবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৯ জন রোগী। হাসপাতালটিতে গত এক মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও রয়েছে নগরীর বিশ্ব কলোনি, কর্নেলহাট, উত্তর কাট্টলী, সীতাকু-ের কুমিরা, ভাটিয়ারি ও সলিমপুর ইউনিয়ন এলাকার রোগী ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাশেষে বাড়িতে ফেরা দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম, চন্দন কুমার নাথ, হারাধন নাথ ও নওশেদ জানান, গত ১৫ দিন ধরে তাদের গ্রামে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। শুরুতে একজন দু’জন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে বর্তমানে পুরো এলাকাজুড়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ এলাকাজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসীরা।
কুমিরা বাজার এলাকায় অরবিট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক কাজী রেজাউল করিম বলেন, গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ শীতলপুর গ্রাম থেকে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসা সকল রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। বিআইটিআইডি কিংবা আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে এটা রোধ করা না গেলে পুরো এলাকায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়বে ডেঙ্গু।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, গত এক মাসে হাসপাতালে বহির্বিভাগে বেশ কিছু রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে পৌর মেয়র ও স্ব স্ব ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের এক তৃতীয়াংশ রোগী সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ শীতলপুর, বড়কুমিরা, ছোট কুমিরা, ভাটিয়ারি ও সলিমপুর এলাকা থেকে আসা। ডেঙ্গুর ধরন নিশ্চিতে তারা আক্রান্ত রোগীদের রক্তের নমুনা ঢাকার রোগ তথ্য, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ডেঙ্গু নতুন উপসর্গের ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন তারা।
পূর্বকোণ/এসি