চট্টগ্রাম রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

টাইটানে স্বামী-পুত্রকে হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ পাক কোটিপতির স্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

২৬ জুন, ২০২৩ | ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

প্রচুর টাকা খরচ করে পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন ধনকুবের শাহজাদা দাউদ। সমুদ্রের তলায় দুর্ঘটনা ঘটে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অতলান্তিকের অতলে তলিয়ে গিয়েছেন পুত্র সুলেমান দাউদও। কন্যাকে নিয়ে রয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি ক্রিস্টিন দাউদ। শাহজাদার স্ত্রী এবং সুলেমানের মা।ক্রিস্টিনের জন্ম জার্মানিতে। তিনি পেশায় এক জন প্রশিক্ষক এবং মনোবিদ।

পেশাগত এবং ব্যবসায়িক মনোবিজ্ঞান নিয়ে অক্সফোর্ডের স্নাতকোত্তর ক্রিস্টিন জার্মানির রোসেনহেম এলাকায় কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানও যেতে হয়েছিল ক্রিস্টিনকে। অনেকের মতে সেখানেই শাহজাদার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। ২০০১ সালে ক্রিস্টিনকে বিয়ে করেন শাহজাদা। ২০০৪ সালে প্রথম সন্তান সুলেমানের জন্ম দেন ক্রিস্টিন। কন্যা এলিনার জন্ম তারও দু’বছর পর। ২০১৯ সালে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় দাউদ পরিবার।

সেই ঘটনা ক্রিস্টিনের মনে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে তিনি পেশা ছেড়ে দেন। স্বামীর মদতে ২০১৮ সালে একটি ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থা শুরু করেছিলেন ক্রিস্টিন। দাউদ পরিবারের অসরকারি সংস্থাগুলির ট্রাস্টি বোর্ডেও ক্রিস্টিনের পাকাপাকি জায়গা রয়েছে। জার্মানি, পাকিস্তান এবং ব্রিটেনের পাশাপাশি কর্মসূত্রে বেশ কয়েক দিন ফ্রান্সেও ছিলেন ক্রিস্টিন। দুই সন্তান এবং স্বামীর সঙ্গে ক্রিস্টিন ব্রিটেনের সারে এলাকার সারবিটনে বাস করতেন। শাহজাদা একজন পাক-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। তাঁর পরিবার পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ধনী পরিবার বলেও পরিচিত। পুত্রকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ অভিযানে গিয়ে আর ফিরে আসেননি শাহজাদা। সলিলসমাধি হয়েছে ১৯ বছরের পুত্র সুলেমানেরও।

স্বামী-পুত্রকে হারিয়ে চোখের জল বাঁধ মানছে না ক্রিস্টিনের। কেন যে তিনি স্বামী এবং পুত্রকে ওই অভিযানে যেতে দিয়েছিলেন, নিজেকে এই প্রশ্নই করছেন তিনি। শাহজাদা এবং পুত্র সুলেমান ছাড়াও টাইটান ডুবোযানে ছিলেন ব্রিটিশ কোটিপতি ব্যবসায়ী হ্যামিশ হার্ডিং, ফরাসি নৌবাহিনীর প্রাক্তন ডুবুরি পল-হেনরি নারজিওলেট এবং ‘ওশানগেট এক্সপিডিশন’-এর সিইও স্টকটন রাশ। ওশানগেটের তরফেই ওই অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রবিবার পাঁচ কোটিপতি যাত্রী নিয়ে অতলান্তিকের অতলে নেমেছিল টাইটান। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন’স থেকে যাত্রা শুরু করেছিল ডুবোযানটি। যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় টাইটান।

নিখোঁজ ডুবোযান উদ্ধারে নেমেছিল আমেরিকা এবং কানাডার সেনা। উত্তর অতলান্তিক মহাসাগরে চলছিল খোঁজ। ডুবোযানের শব্দ ধরার জন্য শব্দতরঙ্গ যন্ত্রও বসানো হয়েছিল। উপকূলরক্ষী এবং বিমানবাহিনীর সঙ্গে তল্লাশিতে নেমেছিল রোবটও। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরে ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে রোবট। মনে করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় ডুবোযানটি ভিতরের দিকে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। এর পর উপকূলরক্ষী বাহিনীর তরফে ওই যাত্রীদের মৃত ঘোষণা করা হয়। যদিও তাঁদের দেহ এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে হিমশৈলে ধাক্কা মেরে উত্তর অতলান্তিকে ডুবে যায় সে সময়ের অন্যতম বিলাসবহুল যাত্রিবাহী জাহাজ টাইটানিক। মৃত্যু হয় ১৫০০-র বেশি মানুষের। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে ১১১ বছর। অতলান্তিক মহাসাগরের প্রায় সাড়ে চার হাজার মিটার নীচে এখনও রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে টাইটানিকের মতো ডুবল টাইটানও।

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন