আলঝেইমার একটি স্নায়ুবিক অবস্থা, যা মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির এ রোগে মস্তিষ্কের কোষগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় বা মরে যায়।
সাধারণত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে আলঝেইমার হওয়ার প্রবণতা বেশি। এখন অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মধ্যেও এ রোগের উপস্থিতি দেখা যায়। আলঝেইমার মূলত ডিমেনশিয়ার সাধারণ রূপ। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথমে বিভ্রান্ত হন। পরে ভুলে যেতে শুরু করেন। ক্রমে তা বাড়তে থাকে।
এমন মারাত্মক একটি রোগ নিরাময়ের কোনো নিশ্চিত চিকিৎসা এখনও নেই। চিকিৎসকরা রোগীর সমস্যার ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এবার সম্ভবত সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে বলে জানালেন গবেষকরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহারের সম্ভাবনা উন্মোচন করেছেন।
আর এমন উদ্ভাবনে অন্যতম ভূমিকা ছিল (এআই) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। সিলিকো গবেষণা এমন একটি কাঠামো উপস্থাপন করে, যা চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য সব উপাদান শনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিশ্লেষণাত্মক রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানকে একত্র করে।
আলঝেইমার রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও অজানা রয়ে গেছে। ধারণা করা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে ‘অ্যামিলয়েড বিটা’ নামে এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয়, যা পরে মস্তিষ্কের ভেতর রক্তকণিকায় অ্যামিলয়েড পরত তৈরি করে, যা মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যুর জন্য পুরোপুরি দায়ী। অ্যামিলয়েড প্রোটিনে প্রভাব রাখতে পারে এমন কোনো ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি।
রসায়নবিদ, জীববিজ্ঞানী ও মেশিন লার্নিং সিস্টেম সমন্বয়ে পরিচালিত টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে থাকা নির্দিষ্ট বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ শনাক্ত করা হয়, যা আলঝেইমারের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে সহায়ক হয়। মেশিন লার্নিং সিস্টেম ও গ্রাফ নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে, কীভাবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ও আলঝেইমার রোগে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলোর মিথস্ক্রিয়া হয়।
১০টি ফাইটোকেমিক্যাল শনাক্ত করা হয়, যা আলঝেইমারের প্রোটিন নেটওয়ার্কে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। এগুলো হলো– কোরেসেটিন, জেনিস্টাইন, লুটোলিন, পালমিটোলেট, স্টিয়ারিক এসিড, এপিজেনিন, এপিক্যাটচিন, কেম্পফেরল, স্কোয়ালিন ও ডেইডজিন। গবেষণায় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টিও আলোচিত হয়। ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা খাবারে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের ব্যবহার বেশি করেন। যে কারণে আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার প্রভাব ওই অঞ্চলে তুলনামূলক কম। সৌজন্য: সমকাল
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ