চট্টগ্রাম সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

পাল্টে গেছে রোগীশূন্য চট্টগ্রামের রেল হাসপাতাল
চিকিৎসা নিতে সেবাপ্রত্যাশীদের ভীড় চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে

পাল্টে গেছে রোগীশূন্য চট্টগ্রামের রেল হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ জুন, ২০২৫ | ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা তখন ১১টা। সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালে মেয়েকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন একই এলাকার গৃহিণী রেহানা বেগম। পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘বাড়িওয়ালার কাছে শুনেছি, এখানে বড় ডাক্তার বসেন। আগে সাধারণ মানুষের জন্য এ সুযোগ ছিল না। এখন পাঁচ টাকার টিকেটে ডাক্তার দেখানো যায়। তাই চলে এলাম। ডাক্তার খুব ভালোভাবে দেখেছেন।’

 

বারান্দার একপাশে দাঁড়িয়ে সেলিম উল্লাহ। নগরের দেওয়ানহাটের বাসিন্দা। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে এসেছেন। বললেন, ‘ডাক্তার তো ভালোই দেখলো। কিন্তু এক্স-রে আর রক্ত পরীক্ষা তো বাইরে করাইতে বলছে। এখানে যদি হইতো, ভালো হইতো।’

 

একসময় এই হাসপাতালটির বারান্দা ছিল শুনশান। করিডোরে পা পড়তো না কারও। চিকিৎসা বলতে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা-যাওয়া। তাও ছিল নগণ্য। কিন্তু এখন বদলে গেছে চিত্র।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষের আনাগোনা বেড়েছে হাসপাতালে। একের পর এক রোগী এসে ভিড় করছেন। আগে যেখানে শুধুমাত্র রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আর তাদের পরিবারের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল হাসপাতালটির দরজা, এখন খুলে দেওয়া হয়েছে সবার জন্য। গত ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এই সেবা মিলছে সর্বসাধারণের জন্য।

 

হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, বুধবার (২৮ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১৩ জন রোগী সেবা নেন। এরমধ্যে সাধারণ রোগী ছিলেন ২১ জন। আর রেলওয়ের নিজস্ব রোগী ৯২ জন। আগের দিন মঙ্গলবার সাধারণ রোগী ছিলেন ২০ জন। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য ছিলেন ১০৭ জন।

 

হাসপাতালটিতে চালু আছে মেডিসিন, গাইনি ও অবস, শিশু, চর্ম ও যৌন, নাক-কান-গলা, ডেন্টাল এবং কার্ডিওলজি বিভাগের আউটডোর সেবা। ১১টি কনসালটেন্টের পদ থাকলেও বর্তমানে যোগ দিয়েছেন ৯ জন। ৮ জন মেডিকেল অফিসার আর ৬ জন নার্স নিয়ে চলছে সেবা। বিনামূল্যে মিলছে ওষুধ। তবে নেই কোনো ফার্মাসিস্ট। সাধারণ রোগীদের জন্য রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে বা আল্ট্রাসনোগ্রাফির সুবিধা এখনো চালু হয়নি। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাইরে করাতে হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরেই চালু হবে এই সুবিধাগুলো।

 

রেলওয়ে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানায়, আপাতত বহির্বিভাগের (আউটডোর) সেবা চালু রয়েছে। বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। তবে রক্ত, এক্স-রে কিংবা অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো রেলওয়ে কর্মচারী ও তাদের পরিবারের জন্যই সীমিত। আগামী অর্থবছর থেকে এই সুবিধা সর্বসাধারণের জন্যও উন্মুক্ত করা হবে। সেই সঙ্গে ইনডোর সেবা চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে।

 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য বড় সুখবর। রেল কর্মচারী-পোষ্য ছাড়াও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত। আগামী অর্থবছর থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ইনডোর সেবাও চালু হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে।’

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট