চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

সর্বশেষ:

তামাকের আগ্রাসনে হুমকির মুখে মৎস্য হেরিটেজ হালদা
হালদা নদীর মানিকছড়ি অংশে বিস্তীর্ণ চরণভূমিতে বিষাক্ত তামাকের ক্ষেত

তামাকের আগ্রাসনে হুমকির মুখে মৎস্য হেরিটেজ হালদা

নিজাম উদ্দিন লাভলু ও মো. রবিউল হোসেন

৩১ মে, ২০২৫ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

তামাকের আগ্রাসনে এশিয়া মহাদেশে রুইজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ও বাংলাদেশের মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদীর মাছসহ জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। নদীটির খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি অংশে বিস্তৃর্ণ চরে চাষাবাদ হচ্ছে তামাক। তামাকের আবাদ বন্ধে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের উদ্যোগে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোন কাজে আসছে না।

 

এ বছর প্রায় ২০ একর ভ‚মিতে তামাকের চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে হালদার উজানে মানিকছড়ির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হারে শুরু হয় তামাক চাষ। তামাকের পাতা ও চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত রস হালদায় প্রবাহিত হয়ে নদীর পানিকে দূষিত করে। এতে হালদায় মাছের ডিম উৎপাদন চরমভাবে হ্রাস পায়।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে চরে নানা শাকসবজির চাষাবাদ হতো। কিন্তু টোব্যাকো কোম্পানির লোকজন কৃষকদের মোটা অঙ্কের অগ্রিম টাকা দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। এ বছর ক্ষেতের মধ্যে স্থাপিত সাতটি চুল্লিতে তামাক প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

 

হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া হালদায় তামাকের বিষাক্ততায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, হালদা নদীতে ২০১৬ সালে ব্রæড মাছ ডিম না ছাড়ার পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয় তামাক চাষ। ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা আইডিএফ এবং পিকেএসএফের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি যৌথভাবে তামাক চাষ বন্ধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে।

 

তিনি জানান, ২০২১-২২ সালের দিকে প্রায় ৯৯ ভাগ তামাকচাষিকে তাদের মূল ধারার কৃষিকাজে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু টোব্যাকো কোম্পানি ২০২৩ সাল থেকে অগ্রিম অধিক টাকা দিয়ে কৃষকদের পুনরায় তামাক চাষে সম্পৃক্ত করে। তামাক চাষ বন্ধ করা না গেলে হালদা নদীর মৎস্য প্রজনন বিপন্ন হবে।

 

খাগড়াছড়ি কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. বাছেরুল আলম বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে হালদা নদীর পাড়ের কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে তামাকের পরিবর্তে শাকসবজি চাষে উৎসাহ প্রদান, কৃষকদের সাথে মাঠ বৈঠকের মাধ্যমে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তাদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। হালদা রক্ষার্থে শুধুমাত্র হালদা নদীর অববাহিকায় নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত তামাক চাষ নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হলে প্রশাসনের সহায়তায় তামাক চাষ বন্ধ করা সম্ভব।

 

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, হালদা নদীর মৎস্যসহ জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় তামাক আবাদ বন্ধে কৃষকদের বিকল্প চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট