মক্তবটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ২০১২ সালে ঠাঁই হয় পাশের হেফজখানায়। তিন কক্ষের হেফজখানা দক্ষিণ প্রেমাশিয়া মোহাম্মদিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় মক্তবটির পাঠদান শুরু হয়। পরে এটি ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে নির্বাচন কমিশন।
মাদ্রাসার শিক্ষক মোস্তাক আহমদ ও স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে পাকা ভবন না থাকায় এটি ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। টিনশেডের দুই কক্ষের মাদ্রাসার এক কক্ষে পুরুষ ও আরেক কক্ষে নারীরা ভোট দেন ঠাসাঠাসি করে।
বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ প্রেমাশিয়া মোহাম্মদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ ৫৮টি ভোটকেন্দ্র জরাজীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তা মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে ইসি।
শুধু বাঁশখালী নয়, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে জরাজীর্ণ ২৭৫ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করেছে কমিশন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব ভোটকেন্দ্র, কেন্দ্র সংলগ্ন রাস্তাঘাট ও সীমানা প্রাচীর মেরামত-নির্মাণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ইসি চিঠি দিয়েছে।
চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে জরাজীর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৭৫টি ভোটকেন্দ্র জরাজীর্ণ পাওয়া যায়। যেগুলোতে ভোটগ্রহণের পরিবেশ নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব ভোটকেন্দ্র মেরামত করে ভোটগ্রহণ উপযোগী করার জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ২০২২টি। ভোটকক্ষ ছিল ১৩ হাজার ৮৫৭টি। গত নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে জরাজীর্ণ হিসেবে ২৭৫টি কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসি জানায়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভোটকেন্দ্রের দরজা-জানালা, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জরাজীর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইসির তালিকা পর্যালোচনা ও সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার বাঁশখালী উপজেলার বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ৫৮টি কেন্দ্রের অবস্থা খারাপ। ইসির তালিকায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে সীমানা প্রাচীর নেই। কক্ষ ভাঙাচোরা। সরু ও অনুন্নত রাস্তাঘাট। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবনের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলায়ও বেশিরভাগ কেন্দ্রে দরজা-জানালা মেরামত করার সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশন। মিরসরাইয়ে ৬১টি ও সীতাকুণ্ডে ৪০টি কেন্দ্রের মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও লোহাগাড়ায় ১৮টি, ফটিকছড়িতে ১১টি, রাঙ্গুনিয়ায় ১১টি, বোয়ালখালীতে ১১টি, পটিয়ায় ১১টি, হাটহাজারীতে ৩টি, কর্ণফুলীতে ২টি, চন্দনাইশে ৬টি, রাউজানে ৩টি, সাতকানিয়ায় ১টি ভোটকেন্দ্র মেরামত করার জন্য চিঠি দিয়েছে ইসি।
জেলা ছাড়াও নগরীর পাঁচলাইশে ২২টি, কোতোয়ালীতে ২টি, ডবলমুরিংয়ে ৩টি, চান্দগাঁওয়ে ৫টি, বন্দর থানায় ৫টি কেন্দ্র সংস্কার করার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। নগরীর কেন্দ্রগুলোর দরজা-জানালা, ফ্যান, পানি, টয়লেট ও বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামত করার জন্য বলা হয়েছে।
ইসির পর্যালোচনায় কেন্দ্রগুলোর ভবনের দরজা-জানালা ভাঙা, বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন, পানির লাইন নেই, ওয়াশরুমের অবস্থা করুণ, সীমানা প্রাচীর নেই, টিনশেড ছাউনি, বিদ্যালয় সড়কের দুরবস্থা। নির্বাচনের আগে এগুলো সংস্কার করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসাশিক্ষা বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে নির্বাচনের আগে এসব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার উল্লিখিত সংস্কার ও মেরামত করার জন্য বলা হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর