জুলাই বিপ্লবের চেতনা আর গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীত কোন সিদ্ধান্ত শান্তি ও গণতন্ত্রকামী নতুন বাংলাদেশ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান কোন প্রতিবেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। আমরা সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কোনকিছু মেনে নিয়ে বন্ধুত্ব করবে না জামায়াতে ইসলামী।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের কিশলয় কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত দিনব্যাপী রুকন প্রার্থী ও ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন সদস্যদের দিনব্যাপী শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহছানুল মাহবুব জোবায়ের। আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমির ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ এবং মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমির ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন ও এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ’র সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম-১০ আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক, ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মমতাজুর রহমান, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোছাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, অধ্যাপক আলমগীর ভুঁইয়া, মাহমুদুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল হাসান রুমি, এম এ গফুর, নুরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সহ-সভাপতি মকবুল আহমেদ, সেক্রেটারি আবু তালেব প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লব জামায়াতে ইসলামীকে অনন্য ভূমিকায় পৌঁছে দিয়েছে। এই ভূমিকা এদেশের মানুষ ও প্রশাসন মূল্যায়ন করেছে। এ দেশের ইসলামী নেতৃত্বের যারা শীর্ষ সারিতে ছিলেন তারা কখনো আওয়ামী লীগের শাসনের কাছে মাথা নত করেনি। তারা আল্লাহর আনুগত্যকে মেনে নিয়েছিল। এজন্য তাদের অনেকে শাহাদাত বরণ করেছে। যারা জামায়াত ইসলামীর ভাবমূর্তি ও নৈতিকতাকে নষ্ট করবে তাদেরকে কোনভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার একমাত্র স্বীকৃত নেতা হলেন মুহাম্মদ (স.)। রাসূল (স.) আমাদের একমাত্র মডেল। তাঁর জিন্দেগিকে অনুসরণ করে আমাদের দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করতে হবে। তিনি সকল ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ ও যোগ্যতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতেন। ইবাদতের সাথে যদি খেলাফতের দায়িত্ব না থাকে পরকালের মুক্তি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। তাই প্রত্যেকের উচিত ইসলামী আন্দোলনে শরিক হওয়া। মুমিন জীবনে প্রতিকূলতা আসবে, এসময় আমাদেরকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রাসূল (স.) ছিলেন বাস্তবভিত্তিক। তিনি তথ্যভিত্তিক কথা বলতেন এবং সে অনুসারে জীবন-যাপন করতেন। রাসূল (স.)’র জীবনী অনুসরণ করে আমাদেরকে বাস্তবভিত্তিক জীবন পরিচালনা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহছানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে বর্তমান সময়ের সালেহ জামায়াত। এটি শহীদী কাফেলার সংগঠন। একটা জনপদে ইসলামের দ্বীন কায়েমের কাজ করলে ওই এলাকায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামগ্রিক বিষয়ের উন্নতি হয়। মুসলমানদের ক্ষতি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসলমানদের উপর মারাত্মক বিপর্যয় গেছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক বিষয়ের ওপর। এই কঠিন দুঃসময়ের প্রেক্ষাপটে যাত্রা শুরু করে জামায়াতে ইসলামী।
তিনি বলেন, ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমানে ৮৫ বছর পর্যন্ত সংগঠনটির আকীদা এক। এই সংগঠনের আকীদার কোন পরিবর্তন হয়নি। এই দলের কাজ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। জেল, জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার, কষ্ট-বেদনা সহ্য করে জামায়াতে ইসলামী দ্বীন কায়েম করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই দ্বীন কায়েমের পথ সহজ নয়, এই পথে সবাই টিকে থাকতে পারে না। রিসালাতের দায়িত্ব পালনে আল্লাহ কিছু মানুষকে বাছাই করেছেন। তাই আমাদের সমস্ত গোলামী হবে একমাত্র আল্লাহর।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, আমাদের সবকিছু দু’জন ফেরেস্তা রেকর্ড করছেন। আল্লাহর হিসাব থেকে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। নিজেকে একটি আয়না সামনে ধরে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের পরিবারই সবচেয়ে বেশি উপকার করতে পারে। আমাদের পরিবার এবং নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আমাদের সকলকে আল্লাহর হুকুম পালন করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, সঠিক নিয়তে কাজ করতে হবে। আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পার্থিব জগতে প্রতিটি নর-নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ